শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন
নাসির উদ্দিন শাহ্- নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ
‘চাকরি নয় সেবা’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে নীলফামারীতে কোনো রকম ঘুষ ও সুপারিশ ছাড়াই ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন ৫১ জন। শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ১ হাজার ৩২৯ জন চাকরি প্রত্যাশীকে পেছনে ফেলে তারা নিয়োগ পান। শনিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে নীলফামারী পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিকভাবে চুড়ান্ত উত্তির্ণদের নাম প্রকাশ করেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান (বিপিএম,পিপিএম)।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানায়- ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে আবেদনকারীর সংখ্যা ১হাজার ৭৮৪জন। এর মধ্যে উপস্থিত ১হাজার ৩২৯জন চাকরী প্রত্যাশীদের মধ্যে শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তির্ণ হয়ে নিয়োগ পান ৫১জন। যার মধ্যে রয়েছে ৪৩জন পুরুষ ও ৮জন নারী।
নিয়োগপ্রাপ্তদের সাথে কথা বলে জানা যায়- বেশিরভাগই বেশিরভাগই হতদরিদ্র ও দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কৃষক, অটোচালক, রিক্সা-ভ্যান চালক, দিনমজুর, শ্রমিক, দর্জি পরিবারের সন্তান। যাদের চাকরির জন্য টাকা দেওয়ার সামর্থ্য যেমন নেই, তেমনি সুপারিশেরও নেই কোনো লোক। মেধা ও শারীরিক পরীক্ষায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের মাধ্যমে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন তারা। পুলিশ জানায়,‘ নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে কৃষক পরিবারের ২৬জন, চাকুরীজীবী পরিবারের ৮জন, ব্যবসায়ী পরিবারের ৫জন, অটোচালক পরিবারের ২জন, রিক্সা-ভ্যান চালক পরিবারের ২জন, শিক্ষক পরিবারের ২জন, দর্জী পরিবারের ১জন, অবসর সেনাসদস্য পরিবারের ১জন ও দিনমজুর ও শ্রমিক পরিবারের রয়েছেন ৪জন।
নিয়োগ পাওয়া ভ্যান চালক বাবার মেয়ে বৃষ্টি রায় বলেন- “এক সময় ভাবতাম ঘুষ ও সুপারিশ ছাড়া চাকরি হয় না। কিন্তু এবার আমার সব ধারণা পাল্টে গেছে। আমার জন্য কেউ কোন সুপারিশ করেনি। আর টাকার কথা যদি বলি, আমার বাবা ভ্যানচালিয়ে যা পায়, তা দিয়ে সংসার চালানোই দায়। টাকা দিয়ে সুযোগ কোথায় আমাদের। এই চাকরিটা হওয়ায় আমার পরিবারের খুবই উপকার হয়েছে।
দর্জি বাবার মেয়ে কনা রানী রায় বলেন- ‘আমি কল্পনাই করতেই পারিনি চাকরি পাবো। সব-সময় শুনেছি টাকা ছাড়া চাকরি হয় না। আমার বাবা একজন দর্জি। আমার এই চাকরিটি খুব দরকার ছিলো। ঘুষ-তদবির ছাড়াই চাকরি দিয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আমাদের পুলিশ সুপার মোখলেছুর রহমান স্যার। ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আশা করছি এখন আমি পরিবারের হাল ধরে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারবো।
মেয়ে কৃষ্ণা রায়ের পুলিশে নিয়োগ পাওয়ায় অনেক খুশি কৃষক বাবা হরেন্দ্রনাথ রায়। তিনি বলেন- ‘সব সময় চেয়েছি আমার মেয়ে কিছু করুক। আল্লাহ মেয়ে দিয়েছেন। খেয়ে না খেয়ে মেয়ের পড়াশোনা চালু রেখেছি। তবে চাকরি নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কারণ আমার টাকা নেই। নেই বড় কোনো আত্মীয়-স্বজনও যারা চাকরি পেতে সহযোগীতা করবে। তারপরও আল্লাহর রহমতে মেধার জোরে আমার মেয়ের চাকরি হয়েছে। এজন্য আমি এসপি স্যারের প্রতি ধন্যবাদ জানাই কোনো ধরনের ঘুষ তদবির ছাড়াই নিয়োগ দেওয়ায়।
নিয়োগপ্রাপ্তরা ও তাদের অভিভাবকরা এরকম নানা অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করায় অভিভাবকরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান (বিপিএম,পিপিএম) কে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এরকম নিয়োগ প্রক্রিয়া আগামীতেও হবে বলে আশাবাদী তারা।
নীলফামারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান (বিপিএম,পিপিএম) বলেন- ‘আমি আশাবাদী ছিলাম স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শতভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই ৫১ জন যুবক-যুবতীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আইজিপি স্যার ও রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির স্যারের দিক নির্দেশনা আমাকে প্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছে। যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। প্রকৃত মেধাবীরাই সুযোগ পেয়েছে চাকরিতে।
তিনি আরো বলেন- ‘সরকারসহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাচ্ছেন পুলিশে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। সেই চাওয়া পূরণেই নীলফামারী পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে চাই।
অনলাইন ভিত্তিক 71sangbad24.com গণমাধ্যমটি
বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশনে নিবন্ধিত, (আই ডি নং-364)।
বাংলাদেশ তথ্য মন্ত্রনালয়ে জাতীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।
আগ্রহীগণ সিভি পাঠাতে ই-মেইল করুনঃ info71sangbad24.com@gmail.com