আরিফ-শেখ-অনুসন্ধানী-প্রতিবেদকঃ
তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানার হঠাৎ হঠাৎ ঝটিকা অভিযান সাড়া ফেলেছে ব্যাপক । সদ্য যোগদান করেই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের হালহকিকত নিয়েছেন হাতের মুঠোয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকই, তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে বদলে যেতে পারে গোটা উপজেলার চিত্র।
জানা গেছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর তারাগঞ্জ উপজেলায় যোগদানের পর থেকে অফিসপাড়াসহ বিভিন্ন মহলের নজর কেড়েছেন তিনি। চলতি পথে অবসরের মধ্যে নিয়মিত হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করায় বেশ নড়েচড়ে বসেছে উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠান। পরিদর্শনের ভীতি বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় , অনিয়মিত ও নিয়ম বহির্ভূত অফিস করা কর্মকর্তা , অবৈধ-ভেজাল খাদ্য ও দ্রব্য-পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, কৃষি , ভূমি , স্বাস্হ্য খাতসহ সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধিতে বিশেষ প্রভাব ফেলছে।
গত সোমবার (২১ নভেম্বর) ঐতিহ্যবাহী তারাগঞ্জ হাটে হঠাৎই বাজার মনিটরিংয়ে যান ইউএনও রুবেল রানা। এসময় মূল্য তালিকা , অবৈধ ভাবে রাস্তা ও ফুটপাত দখল, স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে খাবার পরিবেশন, পরীক্ষা করে পশু জবাই, পিআইসির প্রজেক্টের কাজের তদারকি , দোকান পজেশন বরাদ্দের নামে অবৈধ লেনদেন নিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে সচেতন করা সহ তার নানান পদক্ষেপ গ্রহণ জনমনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। ইতোপূর্বে সরকারি নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রির ব্যানার , লিফলেট বিতরণ করতেও দেখা গেছে ।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার ঝটিকা অভিযান অব্যাহত থাকায় শিক্ষকদের ক্লাসে উপস্থিতির পাশাপাশি প্রতিটি বিদ্যালয়ে হঠাৎ প্রাণ ফিরে পেয়েছে শিক্ষাকার্যক্রমে। তার বিশেষ কিছু বাড়তি পদক্ষেপ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে আরো গতিশীল করেছে। বেড়েছে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার এবং পাচ্ছেন সন্তোষজনক জবাবদিহি। গত ১৩ নভেম্বর উপজেলার ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন ইউএনও রুবেল রানা। এ সময় তিনি শিক্ষকদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্কুলে আসা এবং যাওয়া, যেসকল ছাত্রছাত্রী স্কুলে অনুপস্থিত থাকে তাদের নিয়ে আসার জন্য হোম ভিজিট বাড়ানো, নিয়মিতভাবে অভিভাবক সমাবেশ করা, শিক্ষকদের শিক্ষাদানে আন্তরিক হওয়া যাতে সন্তানরা সুনাগরিক এবং স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সহ নানা বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
গত ২০ ও ৩০ অক্টোবর আলমপুর ও কুর্শা ইউনিয়নে দুটি বাল্য বিবাহ বন্ধ করে জরিমানাও করেন। জানা যায়, ইউএনও রুবেল রানা ১৮ বছরের আগে বাবা-মা কিংবা অভিভাবক বিয়ে দিতে চাইলে তারা আপত্তি করার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে বলেছেন । শুধু প্রশাসন কিংবা বেসরকারি সংস্থা দিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা কঠিন বিষয়। তিনি মনে করেন, সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীরা বেশি বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। সবার আগে প্রতিদিন শ্রেণিকক্ষে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে ছাত্রীদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি অভিভাবক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সচেতন করতে ও গোপনে কেউ বাল্যবিবাহ দিলে কিংবা আয়োজন করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবেন বলে জানা গেছে ।
ইউএনও রুবেল রানাকে ফেসবুক আইডির ( ইউএনও তারাগঞ্জ ) মাধ্যমে প্রতি নিয়ত নানান বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করতেও দেখা গেছে । এতে বিভিন্ন উদ্যোগ ও উন্নয়নকাজ, গণবিজ্ঞপ্তি, প্রজ্ঞাপন , সতর্কীকরণ বার্তা , অভিযান, গাইডলাইন , দক্ষতা উন্নয়ন , তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি , কৃষি , স্বাস্থ্য সেবার তথ্য ব্যাপকভাবে জনগণের মাঝে প্রচারিত হচ্ছে ।
উপজেলার চিত্র বদলের অব্যাহত এই ধারা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও রুবেল রানা জানান, আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি অংশীজনদেরও এগিয়ে আসতে হবে , তাহলেই আমাদের আগামীর প্রজন্ম গড়ে উঠবে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে , সারথি হতে পারবে ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের ।
উল্লেখ্য যে , ইউএনও রুবেল রানা ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন । শিক্ষা জীবনে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ৩৫ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । তারাগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পূর্বে তিনি লালমনিরহাট ডিসি অফিসে সফলতার সাথে কাজ করেন ।