সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
হাসানুর কাবির মেহেদী- নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
কহিনুর বেগম। বয়স ৬০ এর কোঁঠায়। বাড়ি জলঢাকা পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ড চেড়েঙ্গা ডাকুর ডাঙ্গা বটেরতল বাজার মেইন রোড সংলগ্ন ৫০ গজ দূরে। ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়েও কহিনুর বেগমের ভাগ্য জিটেনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর। অথচ কহিনুর বেগমের বাড়ির ৫০গজ দুরে স্থাপিত হয়েছে ৪র্থ পর্যায়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ জমি সহ ঘর।
বাড়ির নিকটবর্তী আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মান হওয়ায় একরাশ স্বপ্ন দেখেছিলেন কহিনুর বেগম যে, এবার একটি ঘর বরাদ্দ পাবো নিশ্চয়। শেষমেশ ঘর বরাদ্দ না পাওয়ায় কষ্টার্জিত হৃদয় নিয়ে কহিনুর বেগম এখন বসবাস করেন অত্যান্ত নুইয়ে পড়া জরাজীর্ণ ছোট্ট একটি পলিথিন মোড়ানো টিনসেট কুঠিরে। ৭৫ বছর উর্দ্ধের কর্ণপ্রবনহীন বয়োবৃদ্ধ অসহায় কর্মহীন স্বামীকে নিয়ে রাত্রি যাপন করেন বাঁশের তৈরী ছোট্ট একটি মাচাঁংঙ্গে। দুই শতক জমির উপর তৈরী ছোট্ট কুঠিরটি পার্সবতী এক ভাই সম্মন্ধের ব্যক্তির নিকট চেয়ে নেওয়া।
বাড়িতে চলাচলের জন্য নেই রাস্তা। বাঁশঝাড়ের ভিতর দিয়ে জলাবদ্ধতা পেড়িয়ে যেতে হয় বাড়ি। একটু বৃষ্টিতেই জ্বলাবদ্ধতায় পরিপূর্ণ বসতঃভিটা। ভুক্তভোগী কহিনুর বেগম দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে এক পুত্র সন্তানে মা। সে পুত্র নিজ সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে অসহায় পিতা-মাতাকে রেখে পাড়ি জমিয়েছেন সুদুর রাজধানী ঢাকায়। তাই বাধ্য হয়ে নিজের ও কর্মহীন বয়োবৃদ্ধ অসহায় রোগান্তক স্বামীর মুখে দু-মুুঠো খাবারের জন্য এই বৃদ্ধ বয়সেও কহিনুর বেগমকে যেতে হয় অন্যের বাসা বাড়িতে কাজের সন্ধানে।
এ যেন বাংলা সিনেমার কল্পকাহিনীকেও হার মানা বাস্তব চিত্র। হ্যাঁ এটি কোন কল্প কাহিনী নয়… বাস্তব..! একটি অসহায় পরিবার কতটা নাভিশ্বাস কষ্টে দিনাতিপাত করতে পারে তা উপলব্ধি করার স্ব-ক্ষমতা সমাজপতিদের কতটা সে প্রশ্ন থেকে যায়।
অথচ আমাদের দেশের মানুষের বৈবাহিক জীবনের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থান হলেও কোনটিই সৌভাগ্য জুটেনি এই বয়োবৃদ্ধ অসহায় কহিনুর যুগলের নছিবে। স্থানীয় কিছু মহৎ ব্যক্তিদের মুখে কহিনুর বেগমের অসহায়ত্বের কথা শুনে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কহিনুর বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাস্তব করুন দৃশ্য। এ সময় কথা হয় ভ‚মিহীন ও গৃহহীন দরিদ্র কহিনুর বেগমের সঙ্গে।
কহিনুর বেগম বলেন, বাবা ওই ভাঙ্গা টিনসেট চালায় ছেলে আমার বউ সন্তান নিয়ে থাকেন। আর হামরা দুই মানুষ এই ঝুপড়িতেই থাকি। তিনি বলেন, হামার বাংলাদেশের মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের একটি ঘরের জন্য কমিশনার, মেয়র, পৌর ভূমি অফিস এমনকি লোক মারফত টিওনো স্যারের নিকট পর্যন্ত আবেদন করেছিলাম।
হামার কথা বলার লোক নাই দেখি হামরা ঘর বরাদ্দ পাই নাই। অবশেষে আমার বাড়ির পাশেই যখন আশ্রয়নের কাজ শুরু হয় তখন মনে আশা ছিল এবার একটি ঘর পাবো। কিন্ত‚ স্থানীয় কিছু কুচক্রী মানুষের জন্যে আমার মত অসহায় পরিবার বঞ্চিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে। এখন এই ভাঙ্গা কুঠিরেই আমাদের ভরসা। ভাগ্য খারাপ বাবা হামার। তাই হামার ভিতি কায়ো চোঁখ তুলে তাকায় না।
এ সময় তিনি প্রতিবেদককে বলেন, যদি একটু মাথা গোঁজানোর মত আশ্রয় (ঘর) পেতাম বাবা তবে বয়োবৃদ্ধ অসহায় রোগাক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে যে কয়দিন আছি বেঁচে থাকতাম। হামরা জানি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিবের জন্য অনেক কিছু করেছে। শুধু বঞ্চিত হছি হামরায় বাবা। দেখেন তো বাবা কিছু করা যায় কি না। ভাই সম্মন্ধের এক জনের নিকট একটু জায়গা নিয়ে বাস করছি। হামার কিচ্ছু নাই বাবা।
এ সময় কথা হয় (আমিনুর ইসলাম) এর সঙ্গে অর্থাৎ কহিনুর বেগম যার জমিতে বসবাস করছেন তার সাথে। আমিনুর ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন, কহিনুর বেগম ও তার রোগাক্রান্ত স্বামি টন্না মামুদের মত অসহায় পরিবার আমাদের পাড়ায় আর অন্য কেউ নাই। একটা ছেলে ছিল তাদের কিন্ত‚ ঋণগ্রস্ত হয়ে এখন স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় গার্মেন্সে কাজ করে শুনেছি।
অসহায় ভেবে বিগত ৩০/৩৫ বছর আগে আমার এই ভিটের দুই শতক জমিতে বসবাস করতে দেই। তখন থেকে আছে। তিনি বলেন, অসহায়ের পাসে কেউ নেই। তার প্রমান কহিনুর দম্পতি। প্রধানমন্ত্রীর উপহার এমন অসহায় পরিবার যদি না পায় তবে কোন অসহায় লোকদের দিচ্ছে তা আমার জানা নেই।
অন্যদিকে চেড়েঙ্গা ডাকুর ডাঙ্গা আশ্রয়ন প্রকল্প সমবায় সমিতির সভাপতি হাসানুর রহমান জানান, কহিনুর বেগমের মত অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার আর দ্বিতীয়টি নেই এ মহল্লায় মনে হয়। কহিনুর বেগম ঘরের জন্য আবেদন করছিল সেটি আমার জানা নেই। তবে খুবই অসহায় পরিবার।
এ সময় তিনি বলেন, ডাকুর ডাঙ্গা আশ্রয়ন প্রকল্পের অনেক ঘর আছে যেখানে মানুষজন ঘর নিয়ে রেখে দিয়েছে। কিন্ত‚ তারা ঘরে উঠে নাই। যদি উপজেলা প্রসাশন বা পৌর কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছা হয় তবে অসহায় কহিনুর বেগমকে এসব ঘরের মধ্যে একটি ঘর দিতে পারে। অন্যদিকে অত্র ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জলঢাকা পৌরসভার প্যানেল মেয়র বাবু রঞ্জিত কুমার রায় বলেন, হ্যাঁ কহিনুর বেগম বাস্তবেই একজন ভূমিহীন।
এমনিতেই আমি পৌরসভা থেকে কিছু অনুদান দেওয়ার প্রস্তাবে রয়েছে। আশ্রয়নের ঘরের জন্য বলেছিল কিন্ত‚ তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। কহিনুর বেগমকে একটি ঘর না দেওয়ায় আমি ইউএনও স্যারকে বলেছিলাম যে, স্যার আশ্রয়নের ঘরে অনেকে থাকে না এমন একটি ঘর এই কহিনুর ভুক্তভোগীকে দিলে ভালো হইতো। ইউএনও স্যার বিষয়টি দেখবেন বলে – জানিয়েছেন। দেখি আমি মেয়র মহোদয় ও ইউএনও স্যারকে বলে কহিনুর বেগমকে আশ্রয়নের একটি ঘর দেওয়া যায় কি না..!