রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ পূর্বাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রংপুরের পীরগাছা উপজেলাধীন কল্যাণী ইউনিয়ন পরিষদ কতৃক অসহায় হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল সুবিধাভোগীদের না দিয়ে, কালো বাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর আলমের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীরা দীর্ঘদিন উক্ত ভিজিএফ চালের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলমের নিকট ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার না পেয়ে, গত (২৮ মে) ২০২৪ জেলা প্রশাসক রংপুর বরাবর ৩০জন ভুক্তভোগী সাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সুত্রে জানাযায়, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল শুক্রবার ৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শাহীন মির্জা সুমন, বিনামূল্যে ১০ কেজি ভিজিএফ চালের স্লিপ দেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদ ঘোষিত (৬ এপ্রিল) উক্ত ভিজিএফের চাল উত্তোলন করতে গেলে,চাল বিতরণে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আমাদের ভিজিএফ চালের কার্ডটি আটকে দেন!
কারণ জানতে চাইলে একাধিক ইউপি সদস্য’র উপস্থিতিতে আমাদের বলেন, এটা চেয়ারম্যানের নির্দেশ। পরে আমরা ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট কার্ড আটকের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটু সমস্যা আছে এবং আমাদেরকে পরের দিন (৭ এপ্রিল) চালের জন্য পরিষদে ডাকেন।
পরের দিন সকালে চাল উত্তোলনের জন্য গেলে ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলম ব্যক্তিগত ব্যস্ততা দেখিয়ে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে বলেন, একপর্যায়ে আমাদের অপেক্ষমাণ রেখেই তিনি পরিষদ ত্যাগ করেন। পরে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার অপেক্ষায় পরিষদে উপস্থিত থেকেও কার্ড আটকের কারণে আমরা চাল উত্তোলন করতে পারিনি।
গত (৬ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল) পর্যন্ত একাধারে ৫ দিন অসংখ্যবার ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট অনুনয় বিনয় করে কোন প্রতিকার পাইনি। শুধু তাই নয় চলমান পরিষদ গঠনের পর থেকেই ৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শাহীন মির্জা সুমন ও ইউপি চেয়ারম্যান নুর আলমের রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে আমরা ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি।
বৈষম্যের বিষয় জানতে চাইলে, ইউপি সদস্য শাহীন মির্জা সুমন বলেন, আমাদের পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আলম একটা আপাদমস্তক দূর্ণীতিবাজ। আমি নির্বাচিত ইউপি সদস্য হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি” করার কারণে বরাবরই আমার ওয়ার্ডের সমস্ত বরাদ্দ লুটপাট করেছে এই বাটপার।
এছাড়াও কল্যাণী ইউনিয়নের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এলজিএসপি, উন্নয়ন সহায়তা, ওয়ান পার্সেন্ট, হাট বাজার, এডিপিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এছাড়াও ইউনিয়নের স্বচাষ তালতলা দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি থাকাকালীন, মাদ্রাসা সুপার লুৎফর রহমানকে সাথে নিয়ে নিয়োগ বানিজ্য ও প্রকল্প থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়েছে।সাবেক সভাপতি সাজেদুল মুন্সির ছেলেকে চাকুরী দেয়ার নাম করেও টাকা নিয়েছিল এই নুর আলম। এছাড়াও সে কল্যাণী ইউনিয়নের বৃক্ষ নিধন করে এক কোটি বিশ লাখ পকেটে ভরেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের কক্ষে ঝুলছে তালা।মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি ফোন বন্ধ করে রাখেন। আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রংপুর জেলা প্রশাসক অফিস সুত্রে জানা গেছে, উক্ত অভিযোগ তদন্তের জন্য গত (৩ জুন) ২০২৪ইং পীরগাছা উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সানোয়ার মোর্শেদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সানোয়ার মোর্শেদ বলেন, তদন্ত কাজ চলমান আগামী সপ্তাহে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হবে।
অভিযোগকারী সুবিধাভোগীরা বলেন, পীরগাছা উপজেলা প্রশাসন আগা থোড়াই দূর্ণীতিগ্রস্ত। তা নাহলে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অসহায় হতদরিদ্রদের জন্য দেয়া সরকারি বরাদ্দকৃত ভিজিএফের চাল, আমরা এখনো পেলাম না কেন? ছয় মাস যাবৎ শুধু তদন্তের কথাই শুনছি। আমাদের উপজেলায় শুধু তদন্ত হয়,বিচার হয়না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, দ্রুতই তদন্ত শেষ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।