মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধি.
রংপুরের আদী নগরী মাহিগঞ্জের ফতেপুরে একজনের ভোগ দখলীয় সম্পত্তি, আরেক জনের নামে দখল দেখিয়ে আদালতে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ উঠেছে, মাহিগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি তহশীলদারের বিরুদ্ধে।
মহানগর রাজস্ব সার্কেলের আওতাধীন সদর উপজেলার মাহিগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, হামিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদন সুত্রে জানা গেছে। মাহিগঞ্জ ভূমি অফিস স্মারক নং- মাহিগঞ্জ/ইউসূঅ/মহানগর/রং/২০২৪-২৬৪
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রংপুর আদালতের এমআর ৮৮৮/২৪ নং মোকদ্দমার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে, গত ০১/০৯/২০২৪ খ্রিঃ তারিখের ৩১.৫৫.৮৫৭৫.৭৭৫.৯৯.০০১.২৩-২৬৩৩নং স্মারকপত্রের নির্দেশ মোতাবেক, গত ০৪/০৯/২০২৪ খ্রিঃ তারিখে সরেজমিন তদন্ত করেন এবং ০৮/০৯/২০২৪ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে দেখা যায় নালিশী সম্পত্তির বর্তমান ভোগ দখলদার মো: কাওছার জামান (বাবলা) পিতা মোঃ আলী আকবর, জিনাত আরা বেগম, পিতা মোঃ জামাল উদ্দিন ও মোছা: জুনাইরা আয়রা, পিতা কাওছার জামান বাবলা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিবেদনের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই!
স্থানীয়রা বলেন, উক্ত নালিশী সম্পত্তিতে ডা. মধুসূধন অধিকারীর বাড়ি দীর্ঘ বছর যাবৎ এবং তাদের দখলেই আছে। সাংবাদিকরা সরেজমিনে গেলে ডা. মধুসূধন অধিকারীর পুত্রবধু সীমু অধিকারী অভিযোগ করে বলেন, বিগত ২৬ জুলাই ১৯৭২ ইং তারিখে ২৭৪৯৭ নং দলীলমুলে জমি কিনে এ ভিটাতেই বসবাস করে আসছে আমার শ্বশুরের পরিবার। আমার স্বামীসহ তার ভাইবোনদের জন্ম এ বাড়িতেই। বাড়ি ভিটা ৩৬ শতাংশ জমি সমানভাবে ১৮ শতক করে আমার শ্বশুর ও জ্যাঠা শ্বশুর মহেন্দ্রনাথ অধিকারীর। হঠাৎ করে গত ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ইং সকাল অনুমান ১০/১১টার দিকে স্থানীয় বিএনপি নেতা কাওছার জামান বাবলা আমাদের বাড়ির সামনে এসে বলেন, এই জমি আমি কিনেছি।
দ্রুত জমি খালি করে দিতে হবে, একথা বলার তিনদিন পর ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ শুক্রবার সকালে, কাওছার জামান বাবলা তার শ্বশুর আওয়ামী লীগ নেতা জামাল মিয়ার উপস্থিতিতে সার্ভেয়ার দারা জমি মাপজোখ করাকালীন সময়ে বাবলা আমাদের বলেন, এই জমি ৫৩,৪৫,০০০/- টাকা দিয়ে কিনেছেন। সেইসাথে ১৮১৮০/২০২৩ নং দলিলের ফটোকপি দেন। রংপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে খবর নিয়ে জানতে পারি, উক্ত দলীলে উল্লেখিত জমির মুল্য ৩১ লাখ ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। মুল দলিলে জমিনের মুল্য ২২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। পরে আমার শ্বশুর ডা. মধুসূদন অধিকারী বাদী হয়ে গত ২৫/০৯/২০২৪ইং রংপুরের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে কাওছার জামান বাবলাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ১৯৪৯ সালের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনের ২৪ ধারার বিধানমতে অগ্রক্রয় (Pre-Emtion) এর নিমিত্তে মামলা করেন।
যার মিস কেস নম্বর ৫৮/২০২৩, উক্ত মোকাদ্দামাটি বিজ্ঞ আদালতে দায়ের করার পর, বিগত ০৪/১০/২০২৩ইং তারিখে ১-৩ নং প্রতিপক্ষ আপত্তি দাখিল অন্তে দোতরফা সুত্রে শুনানী অন্তে বিজ্ঞ আদালত, ১ থেকে ৩নং প্রতিপক্ষকে বে-আইনীভাবে নালিশী সম্পত্তিতে অনুপ্রবেশ করে, ঘর বাড়ি নির্মাণ কিংবা আকার আকৃতি পরিবর্তন না করার জন্য আদেশ প্রদান করেন। এবং বিগত ২৯/১০/২০২৩ইং তারিখে দোতরফা শুনানি অন্তে, বিজ্ঞ আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নালিশী সম্পত্তির আকার, আকৃতি ও প্রকৃতির উভয়পক্ষকে স্থিতিবস্থা (Status Quo) বজায় রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। অত্র মোকদ্দমাটি বিজ্ঞ আদালতে চলমান আছে।
একই তফশিল বর্ণিত নালিশী সম্পত্তি লইয়া, কাওছার জামান বাবলা ডা. মধুসূদন অধিকারী সহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪/১৪৫ ধারামতে মামলা করেন। মামলা নং এম আর ৮৮৮/২৪, মামলা দায়ের পরবর্তী আদালত মাহিগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বরাবরে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ প্রদান করেন। সেই মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং গত ০৮/০৯/২০২৪ইং আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ডা. মধুসূদন অধিকারীর পরিবার উক্ত প্রতিবেদনের ফটোকপি সাংবাদিকের হাতে দিয়ে বলেন, এটা একটা মিথ্যা প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনে আমাদের সাথে জুলুম করেছে মাহিগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম। আমরা এর ন্যায় বিচার চাই। সত্য সঠিকটা জেনেও মিথ্যা তিনি একটি রিপোর্ট কিভাবে দিতে পারে? আমরা রংপুরের প্রশাসনের কাছে বিচার চাই। আমরা দেশের সরকার, প্রশাসন, সাংবাদিক, দেশের মানুষের কাছে ন্যায় বিচার চাই। যে কেউ স্থানীয়ভাবে খবর নিলে জানতে পারবেন, জমি কার ভোগ দখলে।
প্রতিবেদনের কপি হাতে ধরিয়ে এ বিষয় জানতে চাইলে, মাহিগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম, এই প্রতিবেদনের বিষয় সব ভুলে গেছেন বলে জানান! এবং দাবী করেন তিনি সঠিক প্রতিবেদন দিয়েছেন। সে সময় অজ্ঞাত ৪ জন ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, এই স্যার ঘুষ টুষ খায়না খুব ভালো মানুষ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে ভূমি কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম বলেন, ভাই আমরা তো এখানে কাউকে চিনি না। রিপোর্টটা ভূল হতে পারে! আপনারা আদালতে নারাজী করলে আবার তদন্ত দিবে! তখন আমরা ঠিক করে দিব। আগে সঠিক রিপোর্ট না দেয়ার কারণ জানতে চাইলে, মাহিগঞ্জ ভূমি অফিসের সবাই সাংবাদিকদের নিকট দু:খ প্রকাশ করেন। এবং আগামীতে সরকারি দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক থাকবেন বলে জানান।
মাহিগঞ্জ ভূমি অফিসের মনগড়া প্রতিবেদন দাখিলের বিষয় জানতে চাইলে, রংপুর মহানগর রাজস্ব কর্মকর্তা, ফরিদা সুলতানা প্রথমে আদালতে নারাজী করার কথা বলেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি কতৃপক্ষ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে উদাসীনতার বিষয় জানতে চাইলে, তিনি বলেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কোন অনিয়ম করলে, তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একই বিষয় এডিসি রাজস্ব রংপুর, আব্দুল মান্নানের নিকট জানতে চাইলে, তিনি বলেন এ ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কোন অনিয়ম করলে, তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।