শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন
রবিন চৌধুরী- রংপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
সংবাদ প্রকাশের জেরে রংপুরের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে মারধরের অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে সাংবাদিক সমাজ। রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নগরীর কাচারী বাজার থেকে লিয়াকত আলী বাদল নামের ওই সাংবাদিককে তুলে নেওয়া হয়।
পরে তাঁকে ব্যাপক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।লিয়াকত আলী বাদল একুশে টেলিভিশন নামে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও দৈনিক সংবাদ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। তিনি অভিযোগ করেন, রকি নামের এক ব্যক্তি ও জুলাই যোদ্ধা নামে কিছু সহযোগীরা অটোরিকশার লাইসেন্স সংক্রান্ত দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের জেরে তাঁকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে মারধর করেছে। সাংবাদিক বাদলের দাবি রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
বাদল বলেন, “কাচারী বাজার থেকে তুলে নিয়ে তারা সিটি করপোরেশনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চেম্বারে নেওয়ার আগে জোর করে আমাকে ক্ষমা চাইতে বলে। আমি অন্যায় কিছু করিনি, তাই ক্ষমা চাইনি। আমি শুধু ন্যায়বিচার চাই।”ঘটনার পর সাংবাদিক সমাজ রংপুর সিটি করপোরেশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করে।
এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা আন্দোলনরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। হামলায় অন্তত দুইজন সাংবাদিক আহত হন এবং তাঁদের সিটি করপোরেশনের প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ঘটনাটি দুপুর ১টার দিকে ঘটে।
ঘটনার প্রতিবাদে রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরপিইউজে), রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন কঠোর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
আরপিইউজের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, “বাদল একজন সিনিয়র সাংবাদিক এবং রংপুর বিভাগের সাংবাদিক সমাজের সদস্যসচিব। তাঁকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়েছে এটা সাংবাদিক সমাজের ওপর চরম আঘাত।”
তিনি আরও জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। আরপিইউজের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, “এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড রসিকের সিইও। তাঁকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে।
রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরের সভাপতি শাহ্ বায়েজিদ আহমেদ বলেন, সংবাদ প্রকাশের কারণে একজন সাংবাদিককে তুলে এনে মারধর করা নজিরবিহীন। এটি গণতন্ত্র ও স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভয়াবহ হুমকি। আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং সিইও উম্মে ফাতিমার প্রত্যাহার চাই।
সাংবাদিক নেতারা জানিয়েছেন, সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাটি শুনেছি। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে একজনের নাম পাওয়া গেছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। যদি কেউ সামান্যতম প্রমাণ দেখাতে পারে, আমি আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করব।
পরে তিনি জানান, তিনি বর্তমানে ‘ডিসি অফিসের মিটিংয়ে’ আছেন এবং ফোন কেটে দেন। রংপুরে একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে তুলে নিয়ে মারধর ও পরে সিটি করপোরেশনের সামনে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
সাংবাদিক সমাজ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যাহার ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে একজোট হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পদক্ষেপ না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তাঁরা। এ বিষয়ে রবিবার বিকেলে রংপুর ডিসি অফিসের সভা কক্ষে রংপুরের সকল সাংবাদিক, জুলাই যোদ্ধা, পুলিশের উদ্বোধন কর্মকর্তা, সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে রংপুর জেলা প্রশাসক।