বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ অপরাহ্ন
রুহুল আমীন খন্দকার- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
দেশ ও জাতির কল্যানার্থে বিরতিহীন অভিযানের মাধ্যমে মাদক, সন্ত্রাস, অস্ত্র ও জঙ্গিবাদ নির্মূল’সহ দেশের সার্বিক শান্তি শৃঙ্খলা বজায়ের লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। এই ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে সারা দেশব্যাপী পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট কতৃক যথারীতি অভিযান চলমান রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিমানের টিকিট বিক্রি করে পরবর্তী সময়ে যাত্রীকে না জানিয়ে টিকিট রিফান্ড করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। অভিযানে গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম মাহবুবুর উর রশিদ।
গতকাল বুধবার ১১ই মে ২০২২ইং তারিখ দিবাগত-রাত ৯টা ৫৫ ঘটিকায় রাজধানীর কলাবাগানের ২৪ গ্রীন রোডের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের গুলশান জোনাল টিম। গ্রেফতারের সময় তার হেফাজত থেকে যথাক্রমে, বিভিন্ন এয়ালাইন্সের ৮১টি ভুয়া টিকেট, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন, ২টি কম্পিউটার, ১টি কালো রঙয়ের জীপগাড়ি, ১২টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ও একটি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার ১২ই মে ২০২২ইং দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম (বার)।
প্রেস ব্রিফিং কালে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন- গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়- বেশ কিছু ট্রাভেলিং অ্যান্ড ট্যুর এজেন্সি মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকেট আগাম বিক্রি করছে। কিন্তু যাত্রীরা বিমানবন্দরে গিয়ে বিদেশ যেতে না পেরে প্রতারিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম এর নেতৃত্বে একাধিক টিম।
গ্রেফতারকৃত মাহবুবের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে গোয়েন্দা এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন- প্রতারক মাহবুব বিভিন্ন দেশে গমনাগমন, ওমরাহ পালন, সিঙ্গেল টিকেট, আপ-ডাউন টিকেট বিভিন্ন বিষয়ের টিকেট ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচার করে থাকে। কোন বিদেশ যাত্রীর টিকেট প্রয়োজন হলে হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পাসপোর্টের ছবি নেয়। পরবর্তী সময়ে দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিক সাদের মাধ্যমে বেশ কিছু এজেন্সির সহায়তায় টিকেট সংগ্রহ করে বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে যাত্রীকে প্রদান করে। কিন্তু মাহবুব যাত্রার পূর্বেই সামান্য জরিমানা দিয়ে টিকেট রিফান্ড করে নেয়।
তিনি বলেন- ফ্লাইটের দিন মেডিকেল অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা স্টাডি এডমিশন বা পবিত্র ওমরাহ পালন করতে যাওয়া যাত্রীরা টিকেট ইনভ্যালিড দেখতে পান। তখন যেন ওইসব যাত্রীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মত অবস্থা হয়। পরবর্তী সময়ে যাত্রীরা আবার তার সাথে কথা বলে আরো অর্থের বিনিময়ে পুনরায় টিকেট সংগ্রহ করেন এবং আবারও তারা একইভাবে প্রতারিত হন। যাত্রীরা আবার যোগাযোগ করলে মাহবুব মোবাইল বন্ধ করে অফিস পরিবর্তন করে ফেলে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে ডিবি কর্মকর্তা বলেন- মাহবুব ইতোপূর্বে ২০১৫ইং সালে প্যান্টেট ওভারসিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠাতে গিয়ে ডিএমপির মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি থানায় পৃথক মানব পাচার মামলার আসামি হন। এরপর থেকে ঢাকার একাধিক স্থানে এমকিউ ট্রেড, এমকিউ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস কনসালটেন্সি নামে বিভিন্ন অফিস পরিবর্তন করে এ প্রতারণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। ভুক্তভোগী এক ব্যক্তির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে ডিএমপির ভাটারা থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
জনসাধারণকে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিদেশ যাত্রার টিকেট সংগ্রহের ক্ষেত্রে International Air Transport Association (IATA) বা Association of Travel Agents of Bangladesh- ATAB এর অধিভুক্ত এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করার জন্য আহ্বান জানান ডিবি’র এ কর্মকর্তা। তিনি ভ্রমণের ন্যূনতম দুইদিন পূর্বে টিকিট সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করার পরামর্শ প্রদান করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও অতিঃ উপ-পুলিশ কমিশনার কামরুজ্জামান সরদার এর নিদের্শনায় গুলশান জোনাল টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার খলিলুর রহমান এর নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়।