বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন
৭১সংবাদ২৪.কম- ডেস্কঃ
রংপুর জেলাধীন “সোনালী ব্যাংক তারাগঞ্জ উপজেলা শাখায় একটি লেনদেন প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছেঃ
গত ০৫/০৪/২০২২ইং আজিজুর রহমান সোনালী ব্যাংক তারাগঞ্জ শাখায় 1700000/-(সতেরো লক্ষ) টাকা ঋণ মঞ্জুরী পান। পূর্বের দু‘টি লোন সমন্বয় বাবদ 828840/-(আট লক্ষ আটাশ হাজার আট শত চল্লিশ) টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে অবশিষ্ট 871160 /-(আট লক্ষ একাত্তর হাজার এক শত ষাট) টাকা উত্তলোনের জন্য উক্ত দিবসেই সহকর্মী মোস্তাক আহমেদ(উক্ত ঋণের জামিনদার)কে সাথে নিয়ে ২.১৫টায় এম আই সি আর চেক প্রদান করেন, যাহার নম্বর- এসডি- 104218795 হিসাব নম্বর- 34010308 । তৎসময়ে সোনালী ব্যাংক তারাগঞ্জ উপজেলা শাখার ডেবিট ক্রেডিট সেকশনে দায়িত্বরত চেক গ্রহণকারী কর্মকর্তা ছিলেন মোঃ রায়হান আলী।
প্রতারিত ঘটনার বর্ণনাঃ
মঞ্জুরীকৃত ঋণের অবশিষ্ট টাকা উত্তলোন করতে গেলে ইনটারনেট সার্ভিস জ্যাম থাকার কথা বলে ক্রেডিট শাখা কর্মকর্তা রায়হান আলী ঋণ গৃহীতা আজিজুর রহমানের উপরোক্ত নম্বরের চেক গ্রহণ পূর্বক ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেন। আজিজুর রহমান ১৫ মিনিট ব্যাংকে অবস্থানপূর্বক পূনরায় ক্যাশ কাউন্টরে গেলে তিনি (ডেবিট ক্রেডিট কর্মকর্তা রায়হান আলী) বলেন আপনার একাউন্টে টাকা নাই।
তাৎক্ষনিক ভাবে আজিজুর রহমান শাখা ব্যবস্থাপক নুরে আলম সিদ্দিকী‘র কাছে যান এবং ঋণ মঞ্জুরীর আনুমানিক ১৫ মিনিটের মধ্যে ঋণের টাকা একাউন্টে জমা হলো কি-না তা নিশ্চিত না হতেই তার একাউন্টে টাকা নাই সে বিষয়ে তিনি জানতে চান। তখন তিনি বলেন অন্য কাউকে হয়তো চেক দিয়েছেন তিনি টাকা উত্তলোন করেছেন।https://www.sonalibank.com.bd/
আজিজুর রহমানের বক্তব্য মতে- খোঁজ খবর না নিয়েই শাখা ব্যবস্থাপক নুরে আলম সিদ্দিকীর অন্য কাউকে চেক প্রদানের কথা বলায়(তাৎক্ষনিক মত প্রকাশ) এটি একটি গভীর ষঢ়যন্ত্র উপলব্ধী করেন। কারন কাল ক্ষেপনকৃত ১৫ মিনিটের মধ্যে ডেবিট ক্রেডিট কর্মকর্তা রায়হান আলী শাখা ব্যবস্থাপকের কক্ষে এসে একটি গোপন আলাপ সম্পন্ন করেছিলেন)।
পরে শাখা ব্যবস্থাপক নুরে(আলম সিদ্দিকী) খোঁজখবর নিয়ে বলেন- শফিকুল ইসলাম(প্রধান শিক্ষক), পিতাঃ মৃতঃ এমাজ উদ্দিন প্রামানিক নামীয় ব্যক্তি‘র ব্যক্তি একাউন্ট নম্বর- 34004763 তে ভূক্তভোগী আজিজুর রহমানের হিসাব নম্বর-34010308 চেক পাতা এসবি নম্বর- 4596300 দিয়ে 7,50000 টাকা ট্রান্সফর করা হয়েছে। এমন অযৌক্তিক ভাবে টাকা সরিয়ে দেওয়া নেওয়ার বিষয়ে তিনি ব্যাংকে অবস্থানরত অবস্থায় ডিজিএম বরাবর মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান এবং তারাগঞ্জ থানায় কর্মরত এস আই মমতাছির রহমানকে মৌখিক ভাবে বলার পর থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
উল্লেখ্য থাকে যেঃ
আজিজুর রহমানের হিসাব নম্বর-34010308 চেক পাতা এসবি নম্বর- 4596300 চেক পাতাটি ২০১৬ইং সালে ব্যাংক থেকে গ্রহণকৃত যাহা “শ্রমজীবি আদর্শ সমবায় সমিতি”তে ঋনের বিপরীতে ২০১৭ইং সালে উক্ত চেক পাতা সহ আরও ৭টি চেকপাতা জমা রাখা ছিল।(যাহা সমিতির লেনদেন জনিত মামলায় চেকপাতার বিবরণ উল্লেখপূর্বক মামলার কপি প্রমাণ হিসাবে সংরক্ষিত)।
উপরোক্ত বর্ণনা ও মোটা অংকের(7,50000/-) টাকা হিসাবধারীকে অবগতকরন ছাড়াই “ভিন্ন চেক বাহকে”র মাধ্যমে অন্য হিসাব নম্বরে সরানো ব্যাংকিং নিয়ম-নীতি লংঘন কি-না তা জানার বিষয়! যেখানে হিসাবধারীকে(ঋণগৃহীতা) ইন্টারনেট জ্যামের কথা বলে ১৫ মিনিটের সময় নিয়েছিলেন ক্রেডিট কর্মকর্তা রায়হান আলী। এর মধ্যে ঋণের টাকা অবহিতকরন কল ছাড়াই এবং হিসাবধারীকে নিজ হস্তে জমাকৃত চেকে টাকা প্রদান না করে ডেবিট ক্রেডিট কর্মকর্তা রায়হান আলী তথা ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক “ভিন্ন চেক বাহকে”র মাধ্যমে অন্য একাউন্টে টাকা সরানোর বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের যোগসাজোশ ছাড়া সম্ভব নয় বলে আজিজুর রহমানের একটি যৌক্তিক দাবী।
উল্লেখ্য যেঃ
ভূক্তভোগীর ঋণের বিষয়ে বাইরের কেউ জানতেন না এবং হিসাবধারী(ঋণী) নিজেই যেখানে টাকা উত্তলোনের জন্য চেক জমা দিয়েছিলেন যাহার নম্বর-104218795, টাকার পরিমান 8,00000/-(আট লক্ষ) টাকা এর মধ্যে 1,50000/- (একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা 33021479 একাউন্টে জমা করার জন্য সীলমোহর স্বাক্ষরিত ক্যাশ রশীদ সম্পন্ন করাও হয়েছিল। যাহা প্রতারিত ঘটনার পর ক্যাশ কর্মকর্তা শাহীন ইসলাম দেখতে চেয়ে আজিজুর রহমানের হাত থেকে নিয়ে ছিরে ফেলেন এবং ভলিউম বই থেকে উক্ত জমাকৃত রশীদের ক্রমিক নম্বর কলম দ্বারা কেটে দেন।(যাহা শাখা ব্যবস্থাপকের বক্তব্যে স্পষ্ট- বক্তব্য সংরক্ষিত)। বিষয়টি জানাজানি হলে এক পর্যায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপোষ মিমাংসার কথা বলে ধামাচাপা দিয়ে সময় অতিবাহিত করে এবং বিষয়টি এড়িয়ে যায় বলেও ভূক্তভোগভী সূত্রে জানা গেছে।
ভূক্তভোগী আজিজুর রহমান বলেন- তিনি সোনালী ব্যাংক তারাগঞ্জ উপজেলা শাখা কর্তৃপক্ষের অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এমন প্রতারণার সাথে জড়িত থেকে আমার সর্বনাশ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন- আমাকে নেট জ্যামের কথা বলে ১৫ মিনিট সময় নিয়ে আমাকে ফাঁকি দিয়ে আমার কোন রকম কনফার্মেশন ছাড়াই অন্য চেক ধারীকে একটি চেকের মাধ্যমে 7,50000/- টাকা কিভাবে প্রদান করেন।
ভূক্তভোগীর দাবীঃ
ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাংকের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ও উক্ত কর্মদিবসের লেনদেন‘র লেজার বহি থেকে সঠিক তথ্যচিত্র সংরক্ষনপূর্বক উপস্থাপন ও বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ব্যাংকিং নিয়ম নীতি অনুসারে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করা। অভিযোগের ভিত্তিতে (১৯/০৫/২০২২ইং সাংবাদিক কর্তৃক ব্যবস্থাপকের সাথে সাক্ষাৎ কালে জানা যায় ব্যাংকে সিসি ক্যামেরা নাই যাহা ডিজিটাল বাংলাদেশে সরকারী ব্যাংকের জন্য বে-মানান)। এ বিষয়ে ব্যবস্থাপক বলেন- উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা সরকার যদি ক্যামেরা ব্যবস্থা না করেন, তার আর কি করার আছে বলেও মন্তব্য করেন।
আজিজুর রহমানের অভিযোগের ভিত্তিতে সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিস(রংপুর) থেকে একটি তদন্ত কমিটি( দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলেন এসপিও জাকিয়া বেগম ও পিও আকলিমা বেগম) গঠণ পূর্বক ২০/০৪/২০২২ইং তারিখ তদন্ত করা হলেও ঋণ গৃহীতা(ভূক্তভোগী আজিজুর রহমান) কোন ফলাফল এখনও পর্যন্ত পান নাই। প্রতিবেদন প্রদানে যথারীতি গড়িমসি হচ্ছে বলে আজিজুর রহমানের ধারনা।
এছাড়াও আজিজুর রহমান সুষ্ঠ তদন্ত ও সঠিক বিচারের জন্য যে দপ্তরসমূহ লিখিত অভিযোগ করেছেন তা নিম্নরুপঃ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক-প্রশাসন, মহা ব্যবস্থাপক-অডিট ইউনিট, ডিজিএম-কর্মীব্যবস্থাপনা বিভাগ, মানি লন্ডারি শাখা, সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়। মহা ব্যবস্থাপক, জেনারেল ম্যানেজার অফিসার্স- সোনালী ব্যাংক রংপুর, ডিজিএম- প্রিন্সিপাল অফিস রংপুর। জেলা প্রশাসক রংপুর, জেলা দুর্নীতি দমন অফিস রংপুর। জেলা প্রেসক্লাব। (প্রেরিত কপির রশিদ সংরক্ষিত)।
উল্লেখিত ঘটনার তথ্য অনুসন্ধানে উক্ত শাখায় বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে আরও দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর পাওয়া গেছেঃ
গত ০৬/১০/২০১৯ইং সোনালী ব্যাংক তারাগঞ্জ শাখায় ইতিপূর্বে কর্মরত আবুল কাশেম (জুনিয়র অফিসার ক্যাশ) (বর্তমান সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী শাখায় কর্মরত)‘র বিরুদ্ধে ভূক্তভোগী আজিজুর রহমানসহ উপজেলার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আরও ২০ জন শিক্ষক কর্তৃক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎসময়ে আবুল কাশেম দুর্নীতির দায়ে দোষি প্রমাণিত হলেও তৎসময় হইতে অদ্যবধি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি এবং ভূক্তভোগীগণের প্রাপ্ত অর্থ কেউই ফেরৎ পাননি। সোনালী ব্যাংক তারাগঞ্জ শাখায় এমন জালজালিয়তির ঘটনা গত কয়েক বছর থেকে অহরহ ঘটে চলছে (যাহার যথাযোগ্য লিখিত প্রমানাদি সংরক্ষিত)। নিরপেক্ষ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সঠিক ভাবে তদন্ত করলে দুর্নীতির পূর্ণচিত্র উন্মোচিত হবে।
উল্লেখ্য থাকে যেঃ
সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী শাখায় আবুল কাশেমের নামে চেক ডিজ অর্নারসহ আরও ৩টি অভিযোগের বিষয় সন্ধান পাওয়া গেছে, যাহা নীলফামারী যগ্ম জজ আদালতে গত ২০১৯ইং সাল থেকে বিচারধীন আছে। যাহার মামলা নম্বর (১) এস,সি-১৫৩/২০ যাহা যুগ্ম বিচারকী আদালতে আগামী ২১/১১/২০২২ইং স্বাক্ষী গ্রহণের জন্য ধার্য। (২) এস,সি ১৭/২১ আগামী ২৮/০৯/২০২২ইং উক্ত আদালতে বিচার প্রক্রিয়াধীন (৩) দায়রা জজ আদালত রংপুরে এস,সি-৯২১/২১ যাহা আগামী ২৫/০৮/২০২২ইং ১৩৮ ধারায় বিচারাধীন। এছাড়াও সোনালী ব্যাংক তারাগঞ্জ শাখায় বিগত সময়েরে অনেক হিসাবধারীর বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আছে , যাহা পরবর্তীতে সত্যতা সংরক্ষনপূর্বক প্রকাশ করা হবে।
আরও উল্লেখ্য থাকে যেঃ
অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে সাময়িক বরখাস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত অভিযুক্ত কর্মকর্তা, বিচারপ্রক্রিয়যাধীন আরও ৩টি মামলার আসামী হওয়া সত্ত্বে সরকারী ব্যাংকে(সোনালী ব্যাংক) চাকুরীতে বলবৎ যাহা ব্যাংক বিধিমোতাবেক নীতি লংঘনের সামিল বলে গণ্য হওয়ার কথা! এছাড়ও উক্ত শাখাদ্বয়ে হিসাব ধারীসহ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আর্থিক লেনদেন প্রতারণার ঝুঁকিতে আছে বলে আশঙ্কা করা যায়।
ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বঃ