বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন
রুহুল আমীন খন্দকার- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতিকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব নিয়মিত ভাবে সফলতার সহিত জঙ্গী, সস্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, অস্ত্রধারী অপরাধী, ভেজাল পণ্য, ছিনতাইকারী, পর্নোগ্রাফি, প্রতারক চক্র, হ্যাকার, ছিনতাইকারী, কালোবাজারী, আন্তঃজেলা চোর চক্র’সহ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকা থেকে ইমাম পরিচয়ে ২১ বছর ধরে পলাতক হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি শফিকুল রহমান ওরফে শফিকুল ইসলাম ওরফে আব্দুল করিমকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ- ২০০১ইং সালে রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং ২০০৪ইং সালের ২১শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তিনি। এ ছাড়া তিনি ২০০৫ইং সালের ২৭শে জানুয়ারী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলারও চার্জশিটভুক্ত আসামি। আজ শুক্রবার ১৫ই এপ্রিল ২০২২ইং রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন- গ্রেপ্তার শফিকুল নরসিংদী থাকাকালীন পরিচয় গোপন করে আব্দুল করিম নামে পরিচয় দিতেন। তিনি ওই এলাকার চরে অবস্থিত একটি মসজিদে মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে ইমামতির চাকরি নেন। সেইসঙ্গে অত্যন্ত কৌশলের সঙ্গে ভিন্ন স্থানে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা করতেন। এভাবেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে দীর্ঘ ২১ বছর বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করেছিলেন তিনি।
খন্দকার আল মঈন বলেন- ২০০১ইং সালের রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা, ২০০৪ইং সালে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ২০০৫ইং সালের ২৭শে জানুয়ারী হবিগঞ্জ সদর থানাধীন বৈদ্যের বাজারে গ্রেনেড হামলায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত এবং কমপক্ষে শতাধিক লোক আহতের ঘটনায় তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন।
রমনা বটমূলে হামলার পর ২০০১ইং থেকে ২০০৮ইং সাল পর্যন্ত তিনি গোপনে সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। অতঃপর ২০০৮ইং হতে নরসিংদীতে একটি মাদ্রাসায় অবস্থান করে আত্মগোপনে চলে যায়, যোগ করেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।
গ্রেপ্তার শফিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করার পর মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করে। ১৯৭৫ইং থেকে ১৯৮৩ইং সাল পর্যন্ত ঢাকার মাদ্রাসা হতে হেদায়ায় পড়াশোনা করে। হেদায়া পাস করার পর ১৯৮৩ইং সালে পাশের দেশ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। ১৯৮৬ইং সালে সেখান থেকে সাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) পাস করে দেশে ফিরে আসে। ১৯৮৭ইং সালে পাকিস্তানের করাচিতে ইউসুফ যিন নূরী মাদ্রাসায় ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হয়ে ৩ বছরের ইফতা (ফতোয়া) কোর্স সম্পন্ন করেন।
শফিকুল ১৯৮৯ইং সালে পাকিস্তানে অবস্থানকালীন আফগানিস্তানে চলে যায় এবং তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করে। ১৯৮৯ইং সালের শেষের দিকে আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি। বাংলাদেশে আসার পর তিনি ঢাকার খিলগাঁওয়ে একটি মাদ্রাসায় পার্টটাইম শিক্ষকতা শুরু করে। ১৯৮৭ইং সালে পাকিস্তানের করাচির নিউ টাউনে পড়াশোনার সময় মুফতি হান্নানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই প্রতিষ্ঠানে মুফতি হান্নানও পড়াশোনা করতে যায়।
পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে ভ্রমণে গেলে আফগানিস্তানে থাকাকালীন জঙ্গি সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদের’ সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। আফগানিস্তান থেকে দেশে এসে ‘হরকাতুল জিহাদ, বাংলাদেশ’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার চিন্তা করে। সে ১৯৯০ইং সালে দেশে ফেরত এসে সমমনাদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ‘হরকাতুল জিহাদ, বি’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে এবং দাওয়াতের কাজ শুরু করে।
এরপরে ১৯৯০ইং সাল থেকে ১৯৯৩ইং সাল পর্যন্ত সে ‘হরকাতুল জিহাদ, বি’ এর প্রচার সম্পাদক ছিল। ১৯৯৩ইং সাল থেকে ১৯৯৭ইং সাল পর্যন্ত তিনি হরকাতুল জিহাদের আমীর ছিলেন। ১৯৯৭ইং সাল থেকে ২০০০ইং সাল পর্যন্ত তিনি হরকাতুল জিহাদ এর সূরা সদস্য ছিলেন।