রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৮ অপরাহ্ন
আব্দুর রহমান ঈশান- নেত্রকোণা জেলা প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা উপজেলায় বাউসী ইউনিয়নের প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুক্তি বর্মণকে(১৬) কুপিয়ে হত্যা করেছে একই এলাকার বখাটে কাউছার মিয়া(২১)।
ঘটনার পর থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস টিমের কাছে গ্রেফতার হন বখাটে কাউছার। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা ঘটনাস্থল থেকে সন্ধ্যায় উদ্ধার করেছে বারহাট্টা থানার পুলিশ। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে তুমুল প্রতিবাদের ঝড়।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার ছালিপুরা এলাকায় মুক্তিকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে বখাটে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোকন কুমার সাহা বলেন- অভিযুক্ত বখাটে যুবককে গ্রেফতারে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। নিহত মুক্তি উপজেলার প্রেমনগর গ্রামের নিখিল বর্মণের মেয়ে এবং প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মানবিক শাখার শিক্ষার্থী ছিল। বখাটে কাউছার একই গ্রামের সামছু মিয়ার ছেলে।
মুক্তির কাকা লিটন বর্মণ বলেন- বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে ভাতিজিকে কাউছার দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। বিষয়টি তার পরিবারকে জানানো হয়েছিল। মঙ্গলবার স্কুল থেকে ফেরার পথে কাউছার কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। তাকে প্রথমে বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মুক্তির সহপাঠীরা জানায়- স্কুল থেকে একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে ছালিপুরা এলাকায় একটি বাসার কাছে হঠাৎ কাউছার দা দিয়ে মুক্তিকে কোপাতে শুরু করে। আমরা ভয় পেয়ে চিৎকার করি। লোকজন এসে মুক্তিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বারহাট্টা হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল খায়ের আকন্দ বলেন- মানবিক শাখার ছাত্রী মুক্তি শান্ত ও মেধাবী। তার পরিবার খুবই গরিব। ছয় বোনের মধ্যে মুক্তি চতুর্থ। সবাই লেখাপড়া করে। তার দুই বোন নেত্রকোনা কলেজে পড়ে। এক বোন এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
বেসরকারি সংস্থা নারী প্রগতি সংঘের বারহাট্টা ব্যবস্থাপক সুরজিৎ ভৌমিক বলেন- মেয়েটি ইয়ুুথ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য ছিল। বাল্যবিয়ে, ইভটিজিং প্রতিরোধসহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয় নিয়ে সে কাজ করে আসছিল। উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বখাটে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মোঃ ফয়েজ আহমেদ বলেন- বখাটে কাউসার এই ছাত্রীটিকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ছাত্রীটি স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই বখাটে দা দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আমরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওই বখাটেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরো জানান- দীর্ঘ দিন যাবৎ ভিকটিম মুক্তি রাণী’কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত করে। এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।