বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:০৯ অপরাহ্ন
নুর হোসেন- চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রাম নগরে বাড়ছে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার। চলতি মাসের চারদিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৯ জন। মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। এর মধ্যে মঙ্গলবার ৪ঠা জুলাই এক দিনেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৩ জন। তবে এবারে আক্রান্ত রোগীদের ডেঙ্গু ধরণ এখনো চিহ্নিত করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা অন্য সব বছরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে বাড়তে পারে মৃত্যুর সংখ্যাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে সংক্রমণের মাত্রা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। যদিও ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতিতে ১০০ দিনের ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরুর মধ্য দিয়ে ‘ঘুম’ ভেঙেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের।
গেল ২২শে জুন ঢাকডোল পিটিয়ে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করে সংস্থাটি। এমনকি ড্রোন কিনে ছাদ পর্যবেক্ষণ করে জরিমানাসহ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন খোদ চসিক মেয়র। যদিও তার ছিটেফোঁটাও চোখে পড়েনি নগরবাসীর। কিন্তু এরমধ্যেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শনাক্তের হার।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৬১৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১ জন। তারমধ্যে চট্টগ্রাম নগরের ৪২৫ জন এবং বিভিন্ন উপজেলায় ১৮৮ জন। এরমধ্যে জানুয়ারিতে শনাক্ত হয় ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ৫৩ জন, জুনে ২৮২ জন। তবে মারা যাওয়া ১১ জনের মধ্যে ৩ জন জানুয়ারি মাসে এবং জুনে ৬ জন এবং ৪ঠা জুলাই তারিখ পর্যন্ত ২ জন মারা গেছেন।
এছাড়াও আক্রান্ত হওয়াদের মধ্যে পুরুষ ৩১০ জন, নারী ১৫৫ জন এবং শিশু ১৪৮ জন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডেঙ্গুবিষয়ক সর্বশেষ দৈনিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১০৫ জন।
চট্টগ্রামে ডেঙ্গু শনাক্ত ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন— এ বছর আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীদের বৈশিষ্ট্য অন্যবছরের তুলনায় কিছুটা আলাদা। আক্রান্ত রোগীর অন্যান্য উপসর্গের পাশাপাশি বেশির ভাগের রক্তচাপ কম পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি রক্তের অণুচক্রিকাও (প্লাটিলেট) কম পাওয়া যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মামুনুর রশিদ সিভয়েসকে বলেন, গত মাস থেকেই রোগী বেড়ে গেছে। হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাঁই নাই। তবে এখনো পর্যন্ত যতজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের কারও অবস্থা সংকটাপন্ন হয়নি।
আরেকটা বিষয়, এবারে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রক্তে প্লাটিলেট কম পাওয়া যাচ্ছে। সেইসাথে তাদের বেশিরভাগের রক্তচাপও কম।
তিনি আরও বলেন, কোন ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রভাবে এ রকমটা হচ্ছে তা নিশ্চিত হতে আমরা নমুনা সংগ্রহ করছি। সেই নমুনা ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হবে। উনারা পরীক্ষা করতে দেশের বাইরে পাঠাবেন। এরপরই ডেঙ্গুর ধরন নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তাছাড়া ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। সেইসাথে এটি প্রতিরোধ করতে হলে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
একই বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু শনাক্ত ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ মাসের শুরু থেকেই শনাক্তের হার বাড়ছে। বছরের শুরুর দিকের চেয়েও এখন রোগী শনাক্ত হচ্ছে বেশি। তবে যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাঁদের মধ্যে কারও অবস্থা গুরুতর নয়।
এই সময়টাতে এমনিতেই ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়ে যায়। তাই যেসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে, সেই সব এলাকায় অবশ্যই মশক নিধন কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে।