মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ২নং পারুল ইউনিয়নে অবস্থিত নাগদাহ আলাইকুমারী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ পীরগাছা রংপুর এ সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর রংপুর কতৃক খাল খননের পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ এর জন্য ৪২ লাখ টাকার ছোট একটি প্রকল্প দেন!
বিগত ২০২২ইং তারিখে প্রদেয় এই প্রকল্পের খনন কাজ শুরু হয়। বর্তমান সময়ে কাজ সম্পুর্ন হবার পাশাপাশি বিধি মোতাবেক বিলও উত্তোলন প্রায় সমাপ্ত, অথচ এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কোন হিসেব জানেনা সমিতির ৯০ শতাংশ সদস্য।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ সাধারণ সদস্যদের অভিযোগ বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে মরিয়া এই সমিতির সভাপতি শফিকুল মাষ্টার ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর পারুল ইউনিয়নের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রকল্প প্রদান করেছেন, অথচ সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক মিলে নামেমাত্র কাজ করে প্রকল্পের অর্থ আত্নসাৎ করার পায়তারা করছেন।
সরকারি বিধি মোতাবেক সাপ্তাহিক ও মাসিক মিটিং করার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে সাধারণ সদস্যদের নিয়ে কোন প্রকার মিটিং করতে আগ্রহী নন এই দুর্ণীতিবাজ সভাপতি সম্পাদক। ৪২ লাখ টাকার প্রকল্পে ৩৫ লাখ টাকা খাল খনন বাবদ এবং ৭ লাখ টাকা রেফারেন্স বেড ব্লক ও বৃক্ষরোপণ করার কথা থাকলেও।
বৃক্ষরোপণ এর বিল ৩০ ভাগ উত্তোলন করে নিজেদের পকেটেই রেখেছেন দূর্ণীতির দায়ে অভিযুক্ত সভাপতি ও সম্পাদক। সাধারণ সদস্যরা বারংবার তাদের নিকট হিসেব চাইতে গিয়ে অপমান অপদস্ত হয়ে ফিরে এসেছেন। অপরদিকে ৩৫ লাখ টাকার খাল খননে সাধারণ শ্রমিক ব্যবহার করার কথা থাকলেও নিজের খেয়াল খুশিমতো স্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে মাটি খনন করেন অভিযুক্ত এই দুই কর্তা। অধিক লাভের আশায় সাধারণ সদস্যদের ভুলভাল বুঝিয়ে এখন পর্যন্ত বেশ সুনামের সাথে প্রতারণা করে আসছেন এই দুই কর্তা।
অত্র সমিতির সদস্য ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (এলসিএস গ্রুপ ১) এর সভাপতি মাসুদ রানা (নয়ন) অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের একটি অংশ হিসেবে আমাদের নাগদাহ আলাইকুমারী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিঃ কে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর রংপুর, মাটি খনন ও বৃক্ষরোপণ এর জন্য ৪২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রদান করেন।
আমি সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির একজন সভাপতি হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। প্রকল্পে কাজ করার সুবাদে, বিভিন্ন সময় সমিতির সাধারণ সদস্যরা আমার নিকট প্রকল্পের আয় ব্যয়ের হিসাব জানতে চাইলে আমি সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক-কে বিষয়টি অবগত করি। এবং জরুরী মিটিংয়েও সাধারণ সদস্যদের দাবীর কথা জানাই, এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যান সভাপতি সম্পাদক।
পরে গত ৮ই রমজান প্রকাশ্য দিবালোকে সভাপতি শফিকুল ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ, উপজেলার চন্ডিপুর বাজারের পশ্চিমে মঞ্জুর চায়ের দোকানের সামনে তারা গায়ে পরে আমাকে হেনস্থা করেন এবং দেখে নেয়ার হুমকি দেন। পাশাপাশি এই দুর্ণীতিবাজ সভাপতি সম্পাদক আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে বলেন তোর কতবড় স্পর্ধা তুই আমাদের কাছে হিসেব চাইস? আর একদিন হিসেব নিয়ে কথা বললে তোর জিহবা টেনে ছিড়ে ফেলবো।
তারপর দেখবো তোর কোন বাপ আছে আর কে আমাদেরকে ঠেকায়। শুধু আমাকেই নয় আমাদের সমিতির যেই সদস্যই হিসেব চাইতে গেছেন তাদের সকলের সাথেই অসাংগঠনিক ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন সভাপতি সম্পাদক।
সমিতির নারী সদস্য আঞ্জু ৪ঠা জুলাই ২৩ইং হিসেব চাওয়াসহ মিটিংয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে সভাপতির ফুফাতো ভাই ও (সমিতির অর্থ আত্নসাৎ এর মুল হোতা) মুমিনুল ইসলাম বলেন, আপনাদের মন না চাইলে সমিতি থেকে বের হয়ে যান। আপনারা না থাকলেও সমিতি চলবে কোন হিসাব দেয়া হবেনা কাকে বিচার দিবেন দেন গিয়ে।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বিজয় নাথ চন্দ্র বর্মন অভিযোগ করে বলেন, গতমাসে আমি সমিতির হিসেব চাইতে গেলে সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ বলেন, হিসেব নেয়ার যোগ্যতা সবার নাই, বেশী হিসাব হিসাব করলে সমিতি থেকে ঘাড় ধরে বের করে দিব। আমরা (সভাপতি সম্পাদক) যা করবো সেটাই হবে।
সমিতির সাধারণ সদস্য আনোয়ার হোসেন অভিযোগ বলেন, কোরবানি ঈদের আগে আমি সঞ্চয় দেবার পরে মাসিক মিটিংয়ের কথা বলায়, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আমার সাথে যে আচরণ করেছে সেটা মুখে বলার মতো নয়। বর্তমান সভাপতি সম্পাদকের মুল টার্গেট হলো সমিতিটাকে লুটপাট করে খাওয়ার। আমরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট এই প্রতারকদের হাত থেকে আমাদের সমিতিটাকে বাঁচানোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ করে দুর্ণীতিবাজ সভাপতি ও সম্পাদকের হাত থেকে সমিতিকে রক্ষা করার অনুরোধ জানান।
এদিকে সভাপতি সম্পাদকের কাছে দীর্ঘদিন ধর্ণাদিয়ে কোন কুল কিনারা না পেয়ে জেলা প্রশাসক রংপুর বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন সমিতির সদস্য সদস্যরা।
এবিষয়ে জানতে সমিতির সভাপতি, সভাপতি শফিকুল ইসলাম এর নিকট দীর্ঘদিন ঘুরেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সাংবাদিক পরিচয় শুনলেই বিভিন্ন অযুহাতে চরম ব্যস্ততা দেখিয়ে কেটে পড়েন তিনি। একই অবস্থা সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদের।
নাগদাহ আলাইকুমারী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক কতৃক অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, খুব দ্রুত তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরদিকে একই কথা বলেন, পীরগাছা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা সামসুন্নাহার।
প্রথম পর্ব….