রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন
মো. নুরুন্নবী- পাবনা জেলা প্রতিনিধি.
পাবনা সদরের মালিগাছায় এনামুল হক নামের এক বাস মালিকের কাছে মাসিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে তামিম ট্রাভেলসের একটি পরিবহন পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে ইউনিয়নের শংকরপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বাসটি পাবনা-ঈশ্বরদী রুটে চলাচল করত। মাঝেমধ্যে ঈশ্বরদী ইপিজেডের শ্রমিকও যাতায়াত করে।
ভুক্তভোগী এনামুল হক শংকরপুর গ্রামের নায়েব আলী প্রামাণিকের ছেলে। তিনি তামিম ট্রাভেলস বাসটির মালিক অভিযুক্ত রানু বিশ্বাস রুপুপর গ্রামের রশিদ বিশ্বাসের ছেলে। তিনি মালিগাছা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আরেকজন ঘরনাগড়া গ্রামের শামসুল হকের ছেলে লিটন হোসেন। সেও যুবদলের সদস্য বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে তামিম ট্রাভেলসের মালিক এনামুল হকের কাছে মালিগাছা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানু বিশ্বাস মাসিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এসময় চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বাস চলাচল বন্ধ ও পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৩ টার পর তিনটি মোটরসাইকেলযোগে কয়েকজন এসে শংকরপুর গ্রামে দাঁড়িয়ে রাখা বাসে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। এ সময় প্রতিবেশী জাবুল প্রামাণিক, শাহীন প্রামাণিক বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয়দের ডাকাডাকি করলে আগুন নেভাতে এগিয়ে আসে। এ ঘটনায় আনুমানিক ৬ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এ ঘটনা জানতে পেরে দুর দুরান্ত থেকে মানুৃষজন পুড়িয়ে দেওয়া বাসটি দেখতে ভীর করছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি করেন তারা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পাবনা সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেহানুল ইসলাম বুলালের আশ্রয় প্রশ্রয়ে মালিগাছা ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ৫ আগষ্টের পর থেকে রানু বিশ্বাস, লিটন হোসেন, কালাম হুজুরসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি ও যুবদলের নেতারা চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সেজন্য একেরপর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে তারা। এদের পুলিশ আটক করলেও কতিপয় এসব নেতা থানায় গিয়ে আসামিকে মুক্ত করে আনেন।
পুড়িয়ে দেওয়া তামিম ট্রাভেলসের মালিক এনামুল হক বলেন, দুইদিন আগে রানু বিশ্বাস এসে আমার থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। এসময় আমি তাকে বলি যে কিসের জন্য চাঁদা দিতে হবে। সে আমাকে বলে চাঁদা না দিলে বাস চলতে দেওয়া হবে না। পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হবে। প্রতি মাসের শুরুতে চাঁদা টাকা দিতে হবে। এরপর গত রাতে রানু বিশ্বাসের নেতৃত্বে আমার বাসটিকে পুড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমি একদম নি:শ হয়ে গেলাম। থানায় মামলা দায়ের করা হবে। যারা এ কাজ করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
মালিগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুন্তাজ আলী বলেন, বাসটিকে পেট্রোল ঢেলে এমনভাবে পুড়ানো হয়েছে এটা বলার ভাষা নেই। আমি সকালে শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সদরের ওসি ও ইউএনও স্যারকে অবগত করেছি। যারা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। এসব চক্র এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এটা থেকে পরিত্রাণ চায় সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মালিগাছা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানু বিশ্বাসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেননি। একজন্য বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) সঞ্জয় কুমার বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কে বা কাহারা রাত ৩ টার দিকে আগুন ধরিয়েছে। এখনো আমরা ওভাবে নাম পাইনি। সে লিখিত অভিযোগ দিতে থানায় আসতেছে। তখন হয়ত নাম পাওয়া যাবে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহারুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আগে দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর সহায়তা দেওয়া যায় কিনা দেখা হবে।