মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ২নং পারুল ইউনিয়নের অসহায় ও হতদরিদ্র এক নারী বাসিন্দা, ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি)-২০২৩/২৪ অর্থ বছরের সুবিধাভোগীর চুরান্ত তালিকায় নাম থাকার পরেও ভিডব্লিউবি‘র “সোনার হরিণ” নামক সেই কাঙ্ক্ষিত কার্ড কিংবা চাল কোনটাই ছুঁতে পারেনি।
উপরন্তু জানুয়ারি টু মে, পাঁচ মাসে তারই নামের সেই কার্ড দেখিয়ে পঞ্চম ধাপে ১৫০কেজি চাল গায়েব হয়েছে? তাই স্মার্ট বাংলাদেশের সেই সুবিধাবঞ্চিত নারী, সাংবাদিকদের মাধ্যমে জাতির পিতার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে চাল চোরের বিচার চেয়েছেন। ইতিপূর্বে সেই সংবাদ http://71sangbad24.com সহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
উক্ত সংবাদ প্রকাশ হবার পর থেকে নড়েচড়ে বসেন একটি মহল। তারাই পারুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব তোফাজ্জল হোসেন এর ব্যক্তিগত সহকারী মাসুদ কে দিয়ে, গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিচার চাওয়া দুস্ত অসহায় নারী আরজিনা বেগমকে দেউতি বাজারে ডেকে এনে অত্র ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কাফি, ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন এর সুযোগ্য পুত্র সুমন মিয়া।
চেয়ারম্যান এর ব্যক্তিগত সহকারী মাসুদ ভিডব্লিউবি কার্ড বঞ্চিত আরজিনা বেগম কে আদেশমুলক পরামর্শ দেন এভাবে, “দেখেন আপনারা আমাদের নিজের মানুষ কার্ড পান নাই এটাতো আমাদেরকে বলেন নাই সাংবাদিককে বলছেন! সাংবাদিকরা কি আপনার কার্ড আনি দিতে পারবে?” তার চাইতে আপনি থানায় গিয়ে আপনার চাউলের কাগজ হারায় গেছে এইটা বলে একটা জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করে আমাদের হাতে কাগজ দেন। আমরাই আপনার কার্ড খুঁজে দিব।
একথাগুলো বলার আগেই যথাস্থানে উপস্থিত ছিলেন, ভুক্তভোগীর ভাসুর (স্বামীর বড়ভাই)। সবার কথা শুনে আরজিনা বেগম বলেন, আমি সাংবাদিক ভাইকে না জানায়া কোন জিডি করবো না। আমার ৬ মাসের চাউলসহ চোরকে চাই। তখনেই ক্ষেপে যান চেয়ারম্যান পুত্র সুমন, ইউপি সদস্য কাফি ও চেয়ারম্যান এর ব্যক্তিগত সহকারী মাসুদ ওরফে পরিষদের মাসুদ। মাসুদ মৃদু সুরে সুবিধাবঞ্চিত ওই নারীকে বলেন, “এইগল্যা কতা ফির সাংবাদিকোক কন্না” বলে বিদায় দেন তাকে। পরে তিনি রংপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর চাল চোরের বিচার চেয়ে একটি আবেদন করেন।
আবেদন সুত্রে জানা যায় ওই নারী ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট ভিডব্লিউবি প্রকল্পের সুবিধা নিতে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে আবেদন করেন। যাছাই বাছাই কমিটি কতৃক তদন্ত পরবর্তী লটারীর মঞ্চে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। লটারীতে উত্তীর্ণ হবার পর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট ভিডব্লিউবি প্রকল্পের সুবিধাভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন। এতো কিছুর পরেও তিনি সরকারি বরাদ্দের সেই চাল কিংবা ভিডব্লিউবি‘র কাঙ্ক্ষিত কার্ড কোনটাই ছুঁতে পারেনি অসহায় ওই নারী।
পরিষদে ধর্ণা দিয়ে বিফলের একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক বরাবর চাল চোরের বিচার চেয়ে ওই নারী বলেন আমি রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলাধীন ২নং পারুল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা। আমার জন্য সরকারি বরাদ্দের চাল অত্র ইউনিয়নের চোরের চুরি করে খাচ্ছে। আমি একজন অসহায় নারী, একজন দুস্ত নাগরিক হিসেবে এই পরিষদে কিঞ্চিৎ মূল্যায়ন পাইনি! তাই আমাদের ভরসা ও গরীবের আশ্রয়স্থল জেলার পিতা আপনার নিকট করজোড়ে মিনতি করছি। দয়া করে তদন্ত করে চোরকে আইনের আওতায় এনে বর্তমান সরকার তথা আপনার এবং আমাদের সকলের সুনাম বিনষ্টের হাত থেকে বাঁচাতে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
অভিযোগ দেয়ার পরে পারুল ইউনিয়ন পরিষদ কতৃপক্ষ অভিযোগ দাতা আরজিনা বেগম ও আলীজা বেগম কে ডেকে থানায় নিয়ে যান জিডি করার লক্ষে, কিন্তু থানার ভিতরে ঢুকতে না দিয়ে দীর্ঘ সময় থানা গেইটে দাঁড়িয়ে থাকা শেষে, ভুক্তভোগী দুই নারীকে পারুল ইউনিয়ন পরিষদে এনে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বিদায় দেন। ১৭ জুলাই সোমবার পরিষদের মাসুদ ভুক্তভোগী আলীজা ও আরজিনাকে পরিষদে ডেকে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রেখে দুইজনকে ৬ মাসের চাল বাবদ ২ বস্তা করে চাল দিয়ে বিদায় দেন।
ভুক্তভোগী আলিজা ও আরজিনা বেগম মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন কথাগুলো, ভুক্তভোগী ওই দুই নারী আরও বলেন আমরা মোট ছয় মাসে ৬×৩০=১৮০ কেজি করে চাল পাওনা থাকলেও অদৃশ্য কারণে মাত্র ৬০ কেজি চাল পেয়েছি। পুরো চাল চাইতে গেলে পারুল ইউনিয়নের হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নার্গিস পারভীন আমাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তিনি আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আগে চাউল নিতে আসেন নাই কেন? এখন আমরা কি বাপের ঘর থেকে আপনাদের চাউল দিবো? সাংবাদিক বাড়িতে ডাকি যেমন বলছেন, এখন সাংবাদিক আপনার বাড়িতে গেলে বলবেন চাউল এবং কার্ড দু’টোই পেয়েছি! তার শিখিয়ে দেয়া কথা বলতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষেপে যান নার্গিস পারভীন।
অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নার্গিস পারভীন এর নিকট তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে, তিনি প্রতিবেদকের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমি যে, আলীজা ও আরজিনার সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছি তার কি প্রমাণ আছে আপনার কাছে? কোন প্রমাণ ছাড়া কথা বলতে চাইনা আমি, একথা বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। তবে ভুক্তভোগী আরজিনা বেগম বলেন পরিকল্পিতভাবে পরিষ কতৃপক্ষ ওই নারীকে আমাদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে এটা স্পষ্ট।
এদিকে অত্র ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হতদরিদ্র নারী মোছা: মুন্নী ভিডব্লিউবি প্রকল্পের চুড়ান্ত তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগী হিসেবে নাম থাকা স্বত্তেও তিনি জানেনা, তার নামে বরাদ্দকৃত চাউল কে বা কাহারা চুরি করে খাচ্ছে। তাই তিনিও সাংবাদিকদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুন্সি এমপি’র নিকট চাল চোরের বিচার চেয়েছেন।সুবিধাবঞ্চিত মুন্নী বলেন, সরকার আমাকে ৬ মাসে ৬ বস্তা ৬×৩০=১৮০ কেজি চাল দিয়েছে। অথচ আমি ১ কেজি চালও পাইনি!আমি গরীব এই চাউল আমার হক, তাই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমার ন্যায্য পাওনা চাউল ফেরত চাই এবং চাউল চোরের বিচার চাই। সুবিধাবঞ্চিত মুন্নী জেলা প্রশাসক রংপুর বরাবর চাল চোরের বিচার চেয়ে আবেদন করবেন বলেও জানান।
বহুল আলোচিত এই পারুল ইউনিয়নে ভূমিহীনদের জন্য নির্মানাধীন আবাসন প্রকল্প নিয়েও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আছে। একাধিক ভুমিহীনের নিকট নেয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা। বিস্তারিত থাকছে তৃতীয় পর্বে। এদিকে উপজেলার ১নং কল্যাণী ইউনিয়নেও ভিডব্লিউবি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ আছে।
উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে পারুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব তোফাজ্জল হোসেন এর নিকট ফোন দিলে তিনি কল ধরেনি, ইউপি সচিব মতিনুজ্জামান, চেয়ারম্যান পুত্র সুমন এমনকি ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী পরিষদ মাসুক, কেউ-ই ফোন ধরেনি। তাই তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখিত পারুল ইউনিয়নে ভিডব্লিউবি‘র চাল চুরির অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি আজ আমার প্রথম অফিস ডে, অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই বিষয় জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সেলোয়ারা বেগম বলেন, আরজিনা বেগম এর চাল চুরির অভিযোগ পেয়েছি, ইউএনও স্যারের সাথে কথাও হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পর্ব-২….