শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদঃ
অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম “৭১সংবাদ২৪.কম” এ প্রতিনিধি আহ্বান করা হয়েছে। আগ্রহীগণ জিবনবৃত্তান্ত পাঠাতে 71sangbad24.com@gmail.com -এ মেইল করুন
সংবাদ শিরোনামঃ
ফুলবাড়ীর কাজিহাল ইউনিয়ন পরিষদের বেহাল অবস্থা ফুলবাড়ীতে প্রান্তিক নারীদের কর্মমূখী দর্জি প্রশিক্ষণ ধুনটে গোপালনগর ইউনিয়নে ওয়ার্ড কৃষকদলের কর্মী সম্মেলন নীলফামারীতে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন ফুলবাড়ীতে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ ফুলবাড়ীতে পূর্ব শত্রুতার জেরে নষ্ট করলো জমির ধান ধুনটে গোপালনগর ইউনিয়নে কৃষকদলের কর্মী সম্মেলন নড়াইলে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ যুবতী গ্রেফতার মনোনয়ন পেয়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতে সাইফুল ইসলাম ফুলবাড়ীতে প্রিপেইড মিটার স্থাপন বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন ফুলবাড়ীর বড়গ্রাম সীমান্ত এলাকায় থেকে বিপুল পরিমান মাদক আটক অসময়ে বৃষ্টির ফলে অসংখ্য কৃষকের ধান ক্ষতিগ্রস্ত ধুনটে জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন রংপুরে জাতীয় সমবায় দিবস উদ্‌যাপিত নীলফামারীতে উদ্বোধন হলো জৈব সার কারখানা পাথর খনি শ্রমিকদের সন্তানদের জিটিসি কর্তৃক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান ধুনটে যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন হালিম হত্যার আসামিরা পলাতক, ধামাচাপা দিচ্ছে প্রশাসন নীলফামারীতে তারেক রহমানের ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ধুনটে শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট ফাইনাল খেলা

বয়স ৭০, রিকশার প্যাডেলে তার জীবনযুদ্ধ

আবীর আকাশ- লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
ঢাকার তপ্ত দুপুর। ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনের দৃশ্য। ব্যস্ত রাস্তায় নানা যানবাহনের ভিড়ে একজন বৃদ্ধ রিকশাচালকের চোখে-মুখে ক্লান্তি আর অভিজ্ঞতার রেখা স্পষ্ট। বয়স ৭০ ছুঁয়েছে, তবুও থেমে নেই তাঁর জীবনসংগ্রাম। তাঁর নাম নুর ইসলাম। গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলায় হলেও গত প্রায় ৫০ বছর ধরে তিনি ঢাকার রাস্তায় রিকশা চালান।

প্রতিবেদক অ আ আবীর আকাশ এর সঙ্গে তাঁর দেখা হয় হঠাৎ করেই। এ বয়সেও রিকসা চালানো সম্পর্কে জানতে চাইলে অল্প সময়েই তিনি জানিয়ে দেন জীবনের অনেক গল্প, কিছু বেদনা, কিছু অভিমান। নুর ইসলাম বলেন- “ঢাকায় এসেছি তখন বয়স খুব কম। শুরুতে ভাড়া রিকশা চালাইতাম, এখনো তাই চালাই। শুধু বদলাইছে রিকশা, আগে ছিল প্যাডেলের, এখন মটর লাগানো ডিজিটাল রিকশা।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত—চারদেয়ালের বাইরে তাঁর জীবন। ভাড়া রিকশা চালিয়ে আয় করেন দিনে প্রায় ১৬’শ থেকে ১৮’শ টাকা। এর মধ্যে ৪’শ টাকা চলে যায় রিকশা ভাড়ায়। বাকিটা দিয়ে সংসার, খরচ আর একটু সঞ্চয়—সব সামলান। “এই বয়সেও রিকশা চালাই। সংসার থামেনি, তাই আমিও থামি নাই,” বললেন তিনি। নুর ইসলামের পরিবার ছোট নয়। তাঁর তিন ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে ফারুক ট্রাক চালান। মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট দুই ছেলে এখনো পড়াশোনা করে। তাই সংসারের খরচ চালাতে এখনও তাঁকেই পরিশ্রম করতে হয়।

চোখে-মুখে বয়সের ছাপ থাকলেও, কথায় শক্তি আর মনোবল লক্ষ্য করা যায়। “অনেক দিন হইলো ঢাকায় আছি। আগে রিকশা চালানো ছিল কষ্টের। ট্রাফিক পুলিশ টাকা না দিলে চাকা লিক কইরা দিত। এখন ধানমন্ডি এলাকায় সেই ঝামেলা নাই। একটু স্বস্তি পাই,” স্মৃতিচারণ করলেন তিনি। ঢাকায় বছরের পর বছর কাটালেও, ভোলার লালমোহনে তাঁর মন পড়ে থাকে। এখনো মাসে একবার লঞ্চে করে বাড়ি যান। বলেন, “এক মাসে একবার যাই। নদী দেখলে মন ভালো হয়। ঢাকার মতো কংক্রিটের জঙ্গলে শান্তি নাই।

তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি ছিল প্রথম সন্তানকে হারানো। “প্রথম ছেলে সন্তান মারা যাওয়ার পর এমন দুঃখ পাইছিলাম, ১৬ বছর গ্রামে যাই নাই,” কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে এই কথা বলতে গিয়ে। সেই দুঃখ আর শোক তাঁকে মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে দিয়েছিল যে পরিবার গড়তেও সময় লেগেছে। এখন তাঁর ছেলেমেয়েরা তুলনামূলকভাবে ছোট, তাই বার্ধক্যেও তাঁকে থেমে থাকতে হয় না।

নুর ইসলাম শুধু একজন রিকশাচালক নন, তিনি বাংলাদেশের নগরজীবনের এক জীবন্ত ইতিহাস। গ্রাম থেকে শহরে আসা শ্রমজীবী মানুষের যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি। রাজধানীর বুকে প্রতিদিন হাজারো মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার পরও তাঁর গন্তব্য ঠিক হয়নি। অথচ অভিযোগ নেই, অভিমান নেই। শুধু বেঁচে থাকার শক্তিই তাঁকে চালিয়ে নিয়ে যায়।

এমন মানুষেরা আমাদের সমাজের নীরব নায়ক। যাঁদের ঘাম দিয়ে তৈরি হয় শহরের দৈনন্দিন বাস্তবতা। নুর ইসলামের মতো মানুষদের জীবনের গল্পগুলো বলার জন্য খুব বেশি আয়োজন লাগে না—লাগে কেবল একটু মনোযোগ, একটু সহানুভূতি।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

©2019 copy right. All rights reserved 71sangbad24.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com