বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদঃ
অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম “৭১সংবাদ২৪.কম” এ প্রতিনিধি আহ্বান করা হয়েছে। আগ্রহীগণ জিবনবৃত্তান্ত পাঠাতে 71sangbad24.com@gmail.com -এ মেইল করুন
সংবাদ শিরোনামঃ
ইছামতী নদীতে থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার কিশোরগঞ্জকে গ্রীন ও ক্লিন কিশোরগঞ্জ গড়তে চাই- নবাগত ইউএনও নীলফামারীতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইমারত নির্মাণ তারাগঞ্জে একই ব্যক্তির ৬ গরু চুরি নড়াইলে এক গৃহবধূর তিন সন্তান জন্ম ধুনটে বসতভিটা অবৈধ দখল চেষ্টায় থানায় অভিযোগ আবু সাঈদের রক্তের সাথে বেইমানী করবেন না- এটিএম আজহার ফুলবাড়ীর দৌলতপুরে জমি জমার বিরোধে মারপিট ১৭ বছর পর রংপুরে জামায়াতে ইসলামীর জনসভা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে বিএনপি নেতা জুলাই বিপ্লবী শহীদের স্মরণে বৃক্ষরোপণ ও আলচনা ত্রিশালে নিখোঁজ ব্যক্তির লাশ মিলল পুকুরে জলঢাকায় এক শিক্ষার্থীকে বাইসাইকেল দিলেন ইউএনও কর্মীবান্ধব সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন জাহিদ হোসেন তারাগঞ্জে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে টিন ও চেক বিতরণ কুমিল্লায় র‌্যাবের হাতে মাদক সহ গ্রেপ্তার ২ ভারতীয় শাড়ি ও লেহেঙ্গাসহ গ্রেপ্তার ১ নির্মান কাজ শেষ হতে না হতেই ভেঙ্গেছে ব্রীজের প্রতিরক্ষা দেওয়াল রাণীশংকৈলে কৃষক মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবসে বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতা

১০ বছরেই বৃদ্ধ শাহাদাত!

নুর হোসেন- চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
বন্দী জীবন পার করছে মোঃ শাহাদাত হোসেন (১০)। যে বয়সে শিশুদের সঙ্গে খেলায় ব্যস্ত থাকার কথা সে বয়সেই বৃদ্ধের তকমা লেগে গেছে তার গায়ে। বয়স ১০ হলেও তাকে দেখতে লাগে ৬০ বছরের বৃদ্ধের মতো। তাই অন্য শিশুরা তার সঙ্গে মিশতে চায় না, ভয় পায় তাকে। এদিকে ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই বাবা-মায়ের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজগাঁও গ্রামের মো. হানিফ ও নাছিমা আক্তার দম্পতির ছোট সন্তান শাহাদাত। জন্মের চারমাস পরই প্রোজিরিয়া নামক রোগে আক্রান্ত হয় সে। তখন তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেখে দেড় মাস চিকিৎসা করানো হয়। এতে কোনো প্রতিকার মেলেনি। চিকিৎসক বলেছেন এ রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। দুবছর পর তার শরীরে দেখা দেয় হার্নিয়া রোগ। এরপর অপারেশন করা হয়। তবে এখনো মাঝে মাঝে ব্যথা করে।শাহাদাতের বাবা মোঃ হানিফ বলেন, দুটি মেয়ের পর আমার একটি ছেলে সন্তান হয়। অনেক খুশি হয়েছি।

কিন্তু কিছুদিন পর আমার ছেলের শরীরের রোগ দেখা দেয়। যখন তার এই রোগ দেখা দিয়েছে, তখন তাকে নিয়ে চমেক হাসপাতালে দেড়মাস ছিলাম। সেখানে ডাক্তারের কোনো খরচ লাগেনি, তবে ওষুধ কিনতে হয়েছিল। জায়গা সম্পত্তি কোনো কিছু নেই যে বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করাবো। একবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য এসে ছবি তুলে নিয়ে গেছে।

কিন্তু এরপর আর কোনো যোগাযোগ করেননি তারা। আমার ছেলেটা যদি সুস্থ হতো তাহলে অন্যান্য মানুষের সঙ্গে চলাফেরা করতে পারতো। তখন আমি মরে গেলেও শান্তি পেতাম। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মিরসরাইয়ের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কাছে আকুল আবেদন করবো তারা যেন আমার ছেলেটার চিকিৎসার জন্য একটু সহযোগিতা করেন।

তিনি আরও বলেন, রিকশা চালিয়ে কোনো রকম সংসার ও ছেলের চিকিৎসা খরচ চালাচ্ছি। সওজের জায়গায় ছোট একটি ঘর বানিয়ে স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে কোনো রকমে দিন পার করছি। জানিনা কতদিন থাকতে পারবো এখানে। শুনেছি রাস্তা নাকি আরও বড় হবে, রাস্তা বড় হলে তো আমাদের এখানে থাকা সম্ভব না। এমনকি শাহাদাতকে ভালো খাবার বা খেলনা কোনো কিছুই কিনে দিতে পারি না। তখন অনেক খারাপ লাগে। ছেলেকে নিয়ে বাইরে বের হলে অনেকেই নানা ধরনের আজেবাজে মন্তব্য করে, তবুও কিছু বলতে পারি না।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ছোট্ট একটি ঘরে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকেন হানিফ। ঘরের সামনেই সাইকেল চালাচ্ছেন, বিভিন্ন কথা বলছেন শাহাদাত। সব আচরণ শিশুসুলভ হলেও শরীর দেখে মনে হচ্ছে সে তার বাবার চেয়েও বড়।

শাহাদাত বলেন, আমার স্কুলের স্যারেরা আমাকে অনেক আদর করে। কিন্তু আমার বন্ধুরা আমার সঙ্গে খারাপ কথা বলে। আমার সঙ্গে খেলতে চায় না। আমি খেলতে গেলে তারা আমাকে দলে নেয় না। আমি সুস্থ হয়ে আমার বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে চাই। পড়ালেখা করতে চাই। পড়ালেখা করে আমি বড় হয়ে এসি বাস চালাবো।

শাহাদাতের মা নাছিমা আক্তার বলেন, শাহাদাতের জন্মের কিছুদিন পর তার শরীরে বিরল রোগ দেখা যায়। এলাকার মানুষজন থেকে টাকা-পয়সা তুলে চিকিৎসা করেছিলাম, কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসক বলেছেন এ রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে নাই, তাকে সুস্থ করেতে হলে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু ছেলেকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। সড়কের জায়গার ওপর ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ঘর বানিয়ে থাকছি।

শুনছি রাস্তা আরও বড় হবে, তখন তো আমাদের এ জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। তখন আমার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে কোথায় থাকবো কিছুই জানি না।মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, শিশুটির ছবি দেখে মনে হচ্ছে সে প্রোজিরিয়া রোগে আক্রান্ত। এটি খুবই বিরল একটি রোগ। এটি মূলত জেনেটিক কারণে হয় এবং এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিরল। শিশু বয়সে গায়ের চামড়া কুচকে যাওয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ। শিশুটিকে দ্রুত ঢাকা পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল কবির ফিরোজ বলেন, হানিফের জায়গা সম্পত্তি বলতে কিছু নেই, তারা খুবই গরিব। তার ছেলে শাহাদাতকে পরিষদ থেকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তাকে সহযোগিতা করেছি। ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিবো।

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

সংবাদটি শেয়ার করুনঃ

©2019 copy right. All rights reserved 71sangbad24.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com