শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন
আবুল কাশেম- সিলেট জেলা প্রতিনিধিঃ
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় জমি-জমা সংক্রান্ত বিরুধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় কুতুব আলী(৪০) ও লিপি বেগম(২৬) স্বামী-স্ত্রী আহত হয়েছেন। গত ১৮ই সেপ্টেম্বর রবিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা প্রাথমিক ভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। কুতুব উদ্দিন উত্তর দৌলতপুর গ্রামের মৃত হাজি ছনুফর আলীর পুত্র। খবর পেয়ে বিশ্বনাথ থানার ওসি গাজি আতাউর রহমানসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় কুতুব উদ্দিন বাদি হয়ে ৭জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। (বিশ্বনাথ থানার মামলা নং-৮/২২ইং)।
আসামিরা হচ্ছেন, একই গ্রামের রফিক আলীর পুত্র রাজেল মিয়া(২৬), পাবেল মিয়া(৩০), মৃত ইছাক আলীর পুত্র রফিক আলী(৫৫), আকবর আলীর পুত্র নাছির মিয়া(২৫), মৃতঃ আঙ্গুর আলীর পুত্র হেলাল মিয়া(৩২), মৃত আম্বর আলীর পুত্র তাজুল মিয়া(৫৫) ও মৃত ইসাদ আলীর স্ত্রী ছফিনা বিবি(৭৫)। এ মামলায় ৭আসামির মধ্যে ৬জন আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। ১জন পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই সাইফুল মোল্লা।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে- দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর হাসনাজি এলাকায় গ্রামীণ ফোনের নেটওয়ার্ক খুবই দূর্বল। তাই গ্রামীণ ফোন কোম্পানির টাওয়ার বসানোর জন্য কুতুব উদ্দিন তার পৈতৃক ভুমি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং গ্রামীণ ফোন কোম্পানি ভুমির কাগজ পত্র দেখে যাচাই করে সেই ভুমিতে কাজ শুরু করে। ইতি মধ্যে কুতুব উদ্দিনের দাদি ছফিনা বেগম সেই ভুমি তাঁর স্বামীর দাবি করে কাজে বাধা প্রদান করেন।
এতে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জেরে গত ২১/০৭/২০২২ইং তারিখে ছফিনা বিবিকে কুতুব উদ্দিন মারামারি করেছেন মর্মে ২৫/০৭/২০২২ইং তারিখে বিশ্বনাথ থানায় ৩৪১/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৫০৬/ (২)/৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।
(জিআর মামলা নং-১২০/২২ইং)। এই মামলা দায়েরের ৮দিন পর অর্থাৎ ০৩/০৮/২২ইং তারিখে কুতুব উদ্দিন আদালত থেকে জামিন নেয়ার সপ্তাহ খানেক পরই হঠাৎ থানা পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে এবং তার বিরুদ্ধে ৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩০৮/৪২৭/৫০৬ (২) ধারায় আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়। (বিশ্বনাথ থানা মামলা নং-৩/১২৪)। এই মামলায় ছফিনা বিবির হাড় ভাঙ্গা জখমের কথা উল্লেখ করা হয়।
কিন্ত মেডিকেল রিপোর্টে হাড় ভাঙ্গার কোন উপাদান পাওয়া যায়নি। এই মামলায় কুতুব উদ্দিন ১০ দিন জেল খেটেছেন এবং কুতুব উদ্দিনের উপর দায়ের করা প্রথম (জিআর মামলা নং-১২০/২২ইং) মামলাটি তদন্ত শেষে তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই মোয়াজ্জেম হোসেন ২৫/০৮/২০২২ইং তারিখে বাদি কুতুব উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে ৪৪৮/৩২৩/৫০৬ধারায় চার্জশীট দাখিল করেন।
এদিকে বর্তমানে ছফিনা বিবি বিশ্বনাথে অবস্থান করছেন বলে এলাকায় গিয়ে জানাগেছে। ঘটনার দিন সকাল ১১টার দিকে ছফিনা বিবি তার দলবল নিয়ে ঘরের আসবাবপত্র নিয়ে অন্যত্র যেতে চাইলে কুতুব উদ্দিন বাঁধা দেন এবং থানার এসআই মোয়াজ্জেম হোসেনকে বিষয়টি জানান।
তার পর এই ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন ধন মিয়াকে জানালে সত্য মিথ্যা জানতে মেম্বার ছফিনা বিবির বাড়িতে গেলে তার সামনেই কুতুব উদ্দিনের উপর হামলা চালানো হয়। এতে কুতুব উদ্দিন ও তার স্ত্রী লিপি বেগম আহত হন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেম্বার ধন মিয়া।
ঘটনাস্থলে আসা থানা পুলিশকে ঘটনার বর্ণনা দেয়ায় মেম্বারকেও অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। মেম্বার ধন মিয়ার বক্তব্য, এভাবে যদি মিথ্যা বর্ণনা দিয়ে কেউ কারো উপর মামলা দায়ের করে এবং পুলিশও সেই মামলায় মানুষকে হয়রানি করে, তাহলে সাধারণ মানুষের রিনরাপত্তা কোথায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছফিনা বিবির ০১৭২৭-১৩৭৭৬১ মোবাইল নম্বরে একাধিক বার কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে থানার ওসি গাজি আতাউর রহমান জানান- ১৮ তারিখের ঘটনায় কুতুব উদ্দিনের মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। আর ছফিনা বিবিও অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা নেয়া হবে।