শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৭ অপরাহ্ন
আবুল কাশেম- সিলেট জেলা প্রতিনিধিঃ
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের সাধুরগাঁও গ্রামে পুকুরের পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ করার ও সরকারি পাকা সড়কের করার ক্ষতি হওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলী হাসান কামরুলের বিরুদ্ধে।
পানির পাইপের মুখে দেয়াল নির্মাণ করে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা স্থয়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় প্রবাসী আলী হাসান কামরুল (৩২) ও পুকুর মালিক লাইছ মিয়া (৫৫) পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এনিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকাও করছেন এলাকাবাসী। এদিকে বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষই বিশ্বনাথ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
রোববার (৩১ জুলাই) এলাকাবাসীর পক্ষে সাধুরগাঁও গ্রামের আব্দুল আলীম নামের ক্ষতিগ্রস্ত একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে প্রবাসী কামরুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে অভিযুক্ত করেছেন প্রবাসী কামরুলের চাচাতো ভাই গৌছ আলী (৪৫), বাবুল মিয়া (২৫), শশুড় সুন্দর আলী (৬৫), শ্যালক বদরুল ইসলাম (২১), ভাতিজা মামুন মিয়া (২০)’সহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে।
এব্যাপারে আব্দুল আলীম ও লাইছ মিয়ার দাবি, পানি নিস্কাশন বন্ধ করায় জলাবদ্ধতার সৃস্টি হয়ে ‘কালিগঞ্জ-মনাইকান্দি’ সড়কের সাধুরগাঁও এলাকার বেশ কিছু অংশ ভেঙে যাচ্ছে। পানিবন্ধী হয়ে পড়েছেন পুকুর মালিক লাইছ মিয়া ও প্রতিবেশী ইছাক আলী এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অভিযোগকারীও।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে সাধুরগাঁও গ্রামের লাইছ মিয়ার পুকুরের পানি ‘কালিগঞ্জ-মনাইকান্দি’ পাকা সড়কের নিচের পাইপ দিয়ে নিস্কাশন হয়ে আসছিল। কিন্তু নিজের জায়গা হওয়ায় সম্প্রতি তা বন্ধ করে দেন একই গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলী হাসান কামরুল। এতে দু’পক্ষের মধ্যে দেখা দেয় উত্তেজনা।
সংঘর্ষ এড়াতে আব্দুল আলীম মধ্যস্থতা করে সাধুরগাঁও ও দাউদপুর গ্রামের পঞ্চায়েতগনের স্মরনাপন্ন হন। এক পর্যায়ে দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খায়রুল আমিন আজাদ ও পরিষদের মেম্বার শহিদুল ইসলামের উপস্থিতিতে পঞ্চায়েতগণ বিষয়টি নিস্পত্তি করার চেষ্টা করেন।
কিন্তু এতে আরও ক্ষিপ্ত হন প্রবাসী কামরুল। গত বুধবার (২৭ জুলাই) পুকুর মালিক লাইছ মিয়া, আব্দুল আলীমসহ কয়েকজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। ওইদিন রাতে তার পক্ষের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে পাইপের মুখে দেয়াল নির্মাণ করে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা একেবারেই বন্ধ করে দেন। ফলে, জলাবদ্ধতার সৃস্টি হয়ে এলজিইডির ‘কালিগঞ্জ-মনাইকান্দি’ পাকা সড়কের বেশ কিছু অংশ ভেঙে যাচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পুকুর মালিকসহ সাধুরগাঁয়ের বাসিন্ধারা।
এতে ওই প্রবাসী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত শুক্রবার (২৯ জুলাই) থানায় পাল্টা অভিযোগ দেন পুকুর মালিক লাইছ মিয়া। আর রোববার প্রবাসীসহ তার চাচাতোভাই, শশুড়র ও শ্যালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউএনও বরাবরে অভিযোগ দেন আব্দুল আলীম। অভিযোগ পেয়ে থানার তদন্ত ওসি জাহিদুল ইসলাম, এসআই আজহার, এসআই আবুল কাশেম, এসআই দ্বিপংকর সরকার কয়েক দফা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে প্রবাসী আলী হাসান কামরুল এ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি এখনও বৈঠকে আছি, পরে আপনাকে কল দিয়ে কথা বলবো।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম ও সাধুরগাঁও মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ মাহমদ আলী বাবুল বলেন, পঞ্চায়েতগণ বিষয়টি নিস্পত্তির চেষ্ঠা করেছিলেন কিন্তু প্রবাসী তাদের কথা না মানায় তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গাজী আতাউর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সহকারে দেখবেন।
উপজেলা প্রকৌশলী আবু সাঈদ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে সেটার অনুলিপি তিনি পেয়ে গোপনে তদন্ত করেছেন। আর তদন্তে ঘটনার সত্যতাও পেয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান জানান, বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।