Saturday, April 20, 2024
Homeরংপুর বিভাগগাইবান্ধা জেলাগাইবান্ধার যেখানে মানুষ কেনা-বেচার হাট বসে

গাইবান্ধার যেখানে মানুষ কেনা-বেচার হাট বসে

শাহরিয়ার কবির আকন্দ- গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধিঃ
প্রাচীন কাল ও মধ‍্যযুগে সমাজে মানুষ কেনা-বেচার হাট বসত। সেই দাস প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে কবেই। কিন্তু বতর্মানে তথ্য প্রযুক্তির যুগেও ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাতে নিম্নআয়ের মানুষগুলো দু’বেলা রুটিরুজির জন্য আজও নিজেকে বেঁচে দেন মানুষের হাটে।

তেমনি একটি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী পৌরসভার পিয়ারি বালিকা উচ্চ বিদ‍্যালয় মার্কেটের সামনে উপজেলা গেটে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ কেনা-বেচার হাট বসে। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে সকাল ১০ পযর্ন্ত চলে এ হাট। ভোর থেকে একে একে জড়ো হতে থাকে শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের রাজমিস্ত্রী, লেবার, কৃষি শ্রমিক, মাটি কাটা, খোঁয়া ভাঙা এবং সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন বিল্ডিং ও রাস্তা ঘাটে কাজ করা শ্রমিকেরা। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪‘শ জন মানুষ এখানে আসে শ্রম বিক্রি করতে।

পণ্যের মত দর কষাকষিতে বিক্রি হওয়া শ্রমজীবী এসব মানুষকে নিয়ে যে কোন কাজ করানো যায়। ক্রয় করে নিয়ে যাওয়া যায় উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায়। ধান কাটার শ্রমিক ৪শ থেকে ৫‘শ টাকা, কৃষি জমি নিরানি শ্রমিক ৩ থেকে সাড়ে ৩‘শ টাকা, মাটি কাটার জন‍্য ৪‘শ টাকা, রাজমিস্ত্রী ৬‘শ টাকা ও তাদের লেবার সাড়ে ৪‘শ টাকা।

হাটে শ্রম বিক্রি করতে আসা একজন আনোয়ার মিয়া। পেশায় রাজমিস্ত্রী। অভাবের সংসার, বাধ‍্য হয়ে নিজেকে বিক্রি করতে এসেছেন মানুষের শ্রম বিক্রির এ হাটে।

শ্রম বিক্রি করতে আসা কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের রফিক জানান- স্ত্রী-সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার যুদ্ধে এসেছেন। কিন্তু খালি হাতে বাড়ী ফিরলে পরিবারের সদস্যদের একটু কষ্ট পোহাতে হবে।

শ্রম কিনতে আসা পলাশবাড়ী পৌরসভার বাসিন্দা সাব্বির হোসেন জানান- ট্রলির বালু মাটি বাসার রুমে নিতে হবে। দুইজন শ্রমিকের প্রয়োজন। তাই চলে এলাম মানুষ কেনা-বেচার হাটে। গ্রামের মত টাউনে শ্রমিক পাওয়া যায় না। আমাদের একমাত্র ভরসা এখন এসব শ্রমজীবী মানুষের হাট। কোন ঝামেলা ছাড়াই দিন চুক্তিতে ইচ্ছামতো শ্রমিক নিয়ে গিয়ে কাজ করানো যায়।

মানুষ কিনতে আসা পলাশবাড়ী পৌরসভার বাসিন্দা আব্দুস ছামাদ জানান- শ্রমিকের দাম একটু বেশি হলেও এখানে সহজে শ্রমিক পাওয়া যায়। বাসার ইট, বালু ও মাটি সরানোর জন্য মানুষ কিনতে এসেছি। এসব কাজ করতে দুই থেকে তিনদিন লেগে যেতে পারে। শ্রমিক পেয়েছি, তারা প্রতিদিন সাড়ে তিনশ টাকা নিবে। দুপুরের খাবার দিতে হবে।

পলাশবাড়ী পৌরসভার গাইবান্ধা বাসষ্ট‍্যান্ড পিয়ারি মার্কেটের সামনে উপজেলা গেটের এ মানুষ কেনা-বেচার হাট ভোর থেকে সকাল ১০ টা পযর্ন্ত বেশ সরগরম থাকলেও অনেকেই থেকে যায় অবিক্রিত। তাদের অপেক্ষা করতে হয় পরেরদিন আর একটা সূর্য আস্তের। এ হাটে মানুষের কোন খাজনা দিতে হয় না। নেই সমিতি কিংবা চাদাবাজের ঝামেলা। নিজের আপন গতিতেই চলে এ হাট। শ্রমজীবী মানুষেরা সেদিক দিয়ে শান্তিতে থাকলেও তাদের কাজের নিশ্চয়তা এবং জীবনের নিরাপত্তা অনিশ্চিত।

এব‍্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন জানান- সরকারি কোন বরাদ্দ পেলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।##

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments