Wednesday, April 24, 2024
Homeনির্বাচন ও মতামতসিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন- নারী উন্নয়নে সংরক্ষিত সদস্য পদে লড়ছেন নির্যাতিত নারী...

সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন- নারী উন্নয়নে সংরক্ষিত সদস্য পদে লড়ছেন নির্যাতিত নারী নেত্রী রনিতা

মাসুদ রানা- সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জের পিছিয়েপড়া নারীদের উন্নয়নের কথা ভেবে এবং তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে আগামী ১৭ই অক্টোবর-২০২২ইং অনুষ্ঠিতব্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডের সদস্য পদে লড়ছেন জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের অন্যতম সদস্য আত্মপ্রত্যয়ী ও নির্যাতিত নারী নেত্রী তানমির সুলতানা রনিতা।

যিনি নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে জীবনের সাথে লড়াই সংগ্রাম করে রাজনৈতিকভাবে নিজেকে বিকশিত করেছেন। যিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেই এলাকায় রেখেছেন রাজনীতির উজ্জ্বল স্বাক্ষর এবং যিনি তার দুরদর্শিতা ও সাহসীকতা দিয়ে সিরাজগঞ্জের রাজনৈতিক ময়দানে স্থাপণ করেছেন জলন্ত দৃষ্টান্ত।

সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি যেমন স্বয়ং নিজে নির্যাতিত হয়েছেন ঠিক তেমনি তিনি যে পরিবারের বধু হয়েছেন সে পরিবারটিও আওয়ামী ঘরোনার রাজনীতি করতে গিয়ে হামলা-মামলা, জেল-জুলুম-হুলিয়া ও নানাবিধ নির্যাতিতসহ মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছেন।

সংঘটিত হওয়া নির্যাতনের বর্ননা দিতে গিয়ে নারী নেত্রী তানমির সুলতানা রনিতা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগকে স্থানীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তানমির সুলতানা রনিতাসহ তার স্বামী ও স্বামীর পরিবারের সদস্যরা অসংখ্য জুলুম নির্যাতনের শিকার হলেও তারা মাথা নত না করে সাহসী বীরের মতো লড়াই- সংগ্রাম করেছেন আওয়ামীলের দুর্দিনে সেইসাথে স্বামী-দেবরের পাশে থেকে সাহস দিয়েছেন ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তানমির সুলতানা রনিতা।

এতে বিনিময়ে তিনি তার জীবনে রাজনৈতিকভাবে কোন প্রতিদান নেননি। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো তিনি যতোবারই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও সমাজের পিছিয়েপড়া নারীদের কথা ভেবে যখনই জনসেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছেন ততোবারই তিনি দলীয়ভাবে নানা বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন। তারপরও তিনি কোন লোভ-লালসা না করে মুজিব আদর্শ বুকে লালন ও ধারণ করে আওয়ামীলীগের পতাকা বহন করে নীতি ও আদর্শ দিয়ে দলের প্রতি আনুগত্য থেকে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন।

নারী নেত্রী তানমির সুলতানা রনিতা’র রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়- তিনি ১৯৯৭ইং সালে কৈশোরে মুজিব আদর্শের রাজনীতি শুরু করেই ১৯৯৮ইং সালের ২৩শে জুন বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে সফল করতে শত- শত মহিলা নিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানের সফলতার অংশীদারিত্ব গ্রহন করেন। সেখান থেকে তিনি হাটিহাটি পা-পা করে রাজনৈতিক সকল কর্মসূচিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

সে ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৯৯ইং সালের জানুয়ারিতে নলকা ফুলজোর ডিগ্রি কলেজ মাঠে জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় তিনি মহিলাদের বিশাল মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগদান করে নেতাদের তাক লাগিয়ে দেন এবং নেতৃত্বের ভুয়সী প্রশংসা কুড়িয়ে নেন। এমনকি ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে তার গলায় নৌকার ব্যাচ দেখে সেনাবাহিনী তাকে ভোট কেন্দ্র থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এতে তিনি ভয়ে কাতর না হয়ে বরং বীরদর্পে দাঁড়িয়ে থেকে নৌকার কর্মী সমর্থকদের সাহস যোগানের চেষ্টা করেন। এসময় সেনাবাহিনী তখন লাঠিচার্জ করারও ভয় দেখান।

কিন্তু সে সময় কোন ভয়ই তাকে দুর্বল করতে পারেনি। উপরোন্ত তিনি দৃঢ় মনোবলে বলিয়ান হয়ে একজন সাহসী নারী বীরের পরিচয় জনসম্মুখে ফুঁটিয়ে তুলেছেন। এমন সাহসীকতার পরিচয় বহনকারী তানমির সুলতানা রনিতা রাজনৈতিক নানা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০০১ইং থেকে ২০০৬ইং পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ, হরতাল, মিছিল ও মিটিংয়ে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও তার স্বামী মোজাম্মেল হক (চেয়ারম্যান) হাজার হাজার নেতা কর্মী নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান করে প্রতিটি হরতাল ও অবরোধ পালন করেছেন। এজন্য তাকে বার বার প্রশাসন দিয়ে নানারকমের হয়রানি ও অত্যাচার করা হয়েছে। এমন নানাবিধ অত্যাচারের পরও ২০০৬ সালে মহাসড়কে লগি বৈঠা নিয়ে হাজার হাজার মানুষের নেতৃত্বে আন্দোলন করে বেগম জিয়ার ভোটার বিহীন নির্বাচন রুখে দেওয়ার আন্দোলন বেগবান করে রাজনীতিতে বিরল অবদান রেখেছেন তানমির সুলতানা রনিতাসহ তার পরিবার।

শুধু তাই নয় ২০০৬ইং সালের ৪ঠা জুলাই, দেশব্যাপি অবরোধ চলাকালীন সময় তার স্বামী মোজাম্মেলকে র‍্যাব তুলে নিয়ে গিয়েছিল, উদ্দেশ্য ছিল ক্রসফায়ার। কিন্তু তাৎক্ষনিকভাবে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের মিছিল মিটিংয়ের সাথে স্থানীয় হাজার হাজার সাধারণ নারী-পুরুষ মিছিল সহকারে র‍্যাব অফিসে উপস্থিত হলে জনতার আন্দোলনের মুখে সে সময় র‍্যাব মোজাম্মেলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও প্রচন্ড শারীরিক ভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল!

যে নির্যাতনের যন্ত্রণাগুলো তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর পরও রাজনীতির হাল না ছেড়ে দিয়ে তানমির সুলতানা রনিতা দুটি ছোট বাচ্চা সন্তানকে বুকে জড়িয়ে আরো শক্তভাবে হাল ধরে স্বামীকে সাহস যুগিয়েছেন ও দলের জন্য যুদ্ধ ও সংগ্রাম করেছেন। ইতিহাসের স্বাক্ষী আওয়ামী লীগের সেই দুর্দিনে তার বাড়িতে সারাক্ষণ পুলিশি হামলার কারণে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আতঙ্কিত অবস্থার মুখেও পড়েছেন। এমনকি বাড়ীতে পুরুষদের না পেয়ে মহিলাদেরকেও মারপিটসহ বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছে।

কিন্তু দলের স্বার্থে তারা সে নির্যাতন ও হামলা নিরবে সহ্য করেছেন! অসহযোগ আন্দোলনকালে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তানমির সুলতানা রনিতা’র বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটতরাজের পাশাপাশি তার একাডেমিক সকল সনদপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি তার পিঠে লাঠিচার্জ পর্যন্তও করা হয়েছে, যে লাঠিচার্জের যন্ত্রণা তিনি ধুকে ধুকে বহন করে বেড়াচ্ছেন। অপরদিকে তার স্বামী-দেবরকে বাড়ীতে না পেয়ে পুলিশ তার শ্বাশুড়ীকে পর্যন্ত বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে থানায় আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করেছে !

শুধু তাই নয় তানমির সুলতানা রনিতা’র দেবর ফরিদুলকে দরজার চৌকাঠের নিচ দিয়ে পা বের করে পা ভেঙ্গে দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সেইসাথে তার স্বামী মোজাম্মেল এর অত্যাচারিত জীবনের কথা তো সিরাজগঞ্জের সবারই জানা রয়েছে! এই সব লোমহর্ষক ঘটনার মোকাবেলা কিন্তু সিরাজগঞ্জের অন্যান্য যারা বিগত দিনে পদ-পদবীধারী ছিল বা এখনও পদ-পদবীর জন্য প্রস্তুত তারা কিন্তু কখনোই এমন লোমহর্ষক নির্যাতনের সম্মুখীন হয়নি।

রাজনৈতিক জীবনে এমন ঝুঁকিপুর্ণ ঘটনা অন্য কোন পরিবারের সদস্যদের জীবনে সংগঠিত হয়েছে বলে এমন নজির নেই। ২০০২ইং সালে নির্যাতিত নারী নেত্রী তানমির সুলতানা রনিতার স্বামী চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায়, তৎকালীন বিএনপির শাসনামলে তার স্বামীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে রান্ধুনী বাড়ী পুলিশ ক্যাম্প লুটের অস্র মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়। সেই মামলায় সাবেক প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসসহ আরো অনেক নেতা কর্মীদেরও ফাঁসিয়ে দেয় বিএনপি।

সে সময়ও তানমির সুলতানা রনিতাকে লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে। যা সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগসহ কারো অজানা নয় ! কাজেই এমন রাজনৈতিক ইতিহাস তানমির সুলতানা রনিতার পরিবারসহ হাতেগোনা দু‘একজন ছাড়া অন্য কেউ দেখাতে পারবে বলে মনে হয়না ! অথচ অসংখ্য হামলা-মামলা-জুলুম- নির্যাতন সহ্য করা সেই তানমির সুলতানা রনিতা আজ রাজনৈতিক প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

তানমির সুলতানা রনিতার শ্বশুর বাড়ির সদস্য ও গ্রামবাসী ১৯৭০ইং সাল থেকে অদ্যবধি আওয়ামীলীগ এর সাথে জড়িত থেকে ১৯৭৫ইং এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অভিভাবকহীন হয়ে পড়া স্থানীয় আওয়ামীলীগকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বলিষ্ঠ অবদান রেখেছেন এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের সকল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করেছেন।

এতে তানমির সুলতানা রনিতাসহ তার পরিবার নির্যাতিতই হয়েছেন। এদিকে নির্যাতনের ঘাঁনি টানতে টানতে তানমির সুলতানা রনিতা‘র পরিবার এখন সর্বশান্ত অথচ তার উপর করা হচ্ছে বার বার অবিচার। কিন্তু রাজনৈতিক সকল ইতিহাস পর্যালোচনা করে এবার তিনি বিচারের ভার দিয়েছেন জেলা পরিষদের সম্মানিত ভোটারদের হাতে।

নিশ্চয়ই তারা তার যোগ্যতা নিরুপণ করে জেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তানমির সুলতানা রনিতা। সেইসাথে তিনি তার রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সহ সর্বস্তরের মানুষের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments