Saturday, April 20, 2024
Homeবরিশাল বিভাগপটুয়াখালী জেলাতেঁতুলিয়া নদীতে নিষিদ্ধ জাল দ্বারা অবাধে চলছে মাছ শিকার

তেঁতুলিয়া নদীতে নিষিদ্ধ জাল দ্বারা অবাধে চলছে মাছ শিকার

দুলাল হোসেন- পটুয়াখালি জেলা প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীতে নিষিদ্ধ বেড় ও বেহুন্দি জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার চলছে।

ভয়ংকর এই জাল দিয়ে শুধু মাছ শিকারই নয় ধ্বংস করা হচ্ছে সকল প্রজাতির মাছের রেনু ও উপকারী জলজ কিট পতঙ্গ। ফলে দিন দিন প্রকৃতিকভাবে তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীতে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। শিগগরিই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেয়া হলে হারিয়ে যাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে জানা যায়- বাউফলের তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নিষিদ্ধ বেহুন্দি ও বেড় জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। একাধিক ডুবো চর এবং নদীর তীর ঘেঁষে কয়েক’শ মিটার দৈর্ঘ্যরে একেকটি বেড় জাল জোয়ারের সময় পাতা হয়। ভাটার সময় পানি নেমে গেলে বেড় জালে আটকা পড়ে ছোট বড় মাছের পাশাপাশি অসংখ্য মাছের রেনু। অপরদিকে বেহুন্দি জালকে স্থানীয় ভাষায় বাঁধা জাল বলা হয়।

এই বাঁধা জাল পানির গভীরে আড়াআড়ি ভাবে পাতা হয়। বেহুন্দি জালে আটকে পড়া মাছের সঙ্গে অংসখ্য রেনু মারা যায়। তেঁতুলিয়া নদীর চরব্যারেট, মমিনপুর, ধুলিয়া, নিমদি, চরওয়াডেল, বোরহানউদ্দিনের সাঁচড়া ও লালমোহনের নাজিরপুর পয়েন্টে এবং লোহালিয়া নদীর ঝিলনা ও বাহেরচর পয়েন্টে অংসখ্য বেহুন্দি জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। সরকারি নিয়মে ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার ফাঁসের জাল দিয়ে নদীতে মাছ শিকার করার নিয়ম।

অথচ বেড় জাল তৈরি করা হয় মশারী দিয়ে। অপরদিকে বাঁধা জালের ফাঁস মশারীর ফাঁসের চেয়ে কিছুটা বড়। জেলেদের মধ্যে বেড় ও বাঁধা জাল রাক্ষুসে জাল হিসেবেও পরিচিত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ক্ষমতাসীন দলের শেল্টার নিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এক শ্রেণীর দাদন ব্যবসায়ী জেলেদের তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীতে নির্বিঘ্নে বেড় ও
বেহুন্দি জাল দিয়ে মাছ শিকার করাচ্ছেন। ইতিমধ্যে একাধিক দাদন ব্যবসায়ী শূণ্য থেকে কোটিপতি বনে গেছেন। কালাইয়া লঞ্চঘাট এলাকার একাধিক দাদন ব্যবসায়ী শূণ্য থেকে এখন কোটিপতি।

সম্প্রতি বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরব্যারেট এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীর এপাড়-ওপাড় জুড়ে নিষিদ্ধ বাঁধা জাল (বেহুন্দি) পেতে মাছ ধরার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন ৩ শতাধিক জেলে।

বিক্ষোভে অংশ নেয়া জেলেরা জানান, ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাঁচড়া ইউনিয়নের শতাধিক জেলে তেঁতুলিয়া নদীর এপাড় ওপাড় জুড়ে প্রতিদিন নিষিদ্ধ বাঁধা জাল পেতে মাছ শিকার করছে। ফলে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অসংখ্য রেনু ধ্বংস হচ্ছে। অবিলম্বে ওই রাক্ষুসে জালের ব্যবহার বন্ধ করার দাবী জানান জেলেরা।

ইলিশ প্রজননের জন্য ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার পর বর্তমানে নদ-নদীতে ‘চাপিলা’ হিসেবে পরিচিত ইলিশের পোনায় সয়লাব হয়ে গেছে। প্রতিবছরই ইলিশের পোনা শিকার করার জন্য নিষিদ্ধ বাঁধা জাল ব্যবহার করে একটি অসাধু চক্র। এবারও তেঁতুলিয়া নদীতে বাঁধা জাল পেতে মাছ শিকারের মহোৎসবে মেতেছে চক্রটি।

এ প্রসঙ্গে বাউফল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার বলেন- বাঁধা ও বেড় জালের কারনে নদীতে প্রকৃতিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে।

সেক্ষেত্রে মৎস্য বিভাগ কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে অবৈধ জাল উদ্ধারের পর তা ধ্বংস করছে।

তিনি বলেন- নদীতে অবৈধ জালের ব্যবহার বন্ধের জন্য র‌্যাব ও কোষ্টগার্ডের অভিযান বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে অভিযান পরিচালনার জন্য সরকারকে আধুনিক নৌযান ও চাহিদা মোতাবেক আর্থিক বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments